Advertisement
E-Paper

নজরদারি নেই, অবাধে চলে চোলাই কারবার

অনেকেই চোলাইয়ের টানে ভিড় করছেন পুরশুড়ার আকবরি খালের পাশে।

তৈরি হচ্ছে চোলাই। পুড়শুড়ায়। নিজস্ব চিত্র

তৈরি হচ্ছে চোলাই। পুড়শুড়ায়। নিজস্ব চিত্র

পীষূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০৬:০৬
Share
Save

পলিথিনের প্যাকেটটি দাঁত দিয়ে ছিঁড়লেন যুবকটি। স্বচ্ছ তরল কিছুটা গলায় ঢেলে বললেন , ‘‘ঘরে থাকলেই শুধু অভাব-অনটনের গল্প। তাই চলে এসেছি ঠেকে। এই বিপদের দিনে টেনশন ভুলে থাকতে এটাই তো একমাত্র ভরসা!’’

শুধু ওই যুবকই নন, অনেকেই ওই তরলের টানে ভিড় করছেন পুরশুড়ার আকবরি খালের পাশে। যেখানে নয়-নয় করে গজিয়ে উঠেছে ৪৫টি চোলাইয়ের ঠেক। ২০ টাকায় মিলছে ৬৫ মিলিলিটারের প্লাস্টিকের পাউচ। অবাধে চলা ঠেকগুলিতে রোজ চোলাইয়ে চুমুক দিচ্ছেন কয়েকশো মানুষ। করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত পুলিশ-প্রশাসনের সময় নেই সে দিকে নজর দেওয়ার। তাই রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের ব্যবসা। অভিযোগ, করোনা-কালে আরামবাগ মহকুমার অনেক জায়গাতেই ফুলেফেঁপে উঠেছে এই কারবার।

বর্ষার মরসুমে ১০০ দিনের কাজ কমেছে। আমন ধান রোয়ার কাজও পুরোদমে শুরু হয়নি। ঘরে নেই পর্যাপ্ত অর্থ। নিত্য অশান্তি লেগে থাকছে সংসারে। অনেকেই দাবি, তা থেকেই সাময়িক পরিত্রাণ পেতে ভিড় করছেন চোলাইয়ের ঠেকে। পুরশুড়ার সোদপুরের পাশেই রয়েছে রাউতাড়া গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে আকবরি খাল। খালের দুই পাড়ে রয়েছে মোট ৪৫টি চোলাইয়ের ভাটি! ১৮ থেকে ৮০—সব বয়সের লোকজনকেই দেখা যায় সেখানে।

মাস কয়েক আগে পুলিশ এবং আবগারি দফতর ঠেকগুলি ভেঙে দিয়েছিল। তার দু’দিনের মধ্যে ফের চালু হয় সেগুলি। এক চোলাই কারবারি বলছেন, “এই কারবারের সঙ্গে প্রায় শ’তিনেক পরিবার যুক্ত। আগে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার লিটার মদ তৈরি হত। এখন হয় গড়ে প্রায় ৮ হাজার লিটার। বাংলা মদ এবং বিলাতি মদের দাম বাড়ায় এখন চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। তাই এখন খদ্দেরও বেশি।”

‘‘বিষাক্ত চোলাই খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে মাঝেমধ্যেই। কিন্তু স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা কে ভাবে,’’ আক্ষেপ প্রকাশ করে বললেন মহকুমা আবগারি দফতরের এক কর্তা। তাঁর দাবি, ‘‘শুধু রাউতাড়ায় যে পরিমাণ চোলাইয়ের কারবার হয়, তাতে সরকারের দৈনিক রাজস্ব ক্ষতি হয় চার লক্ষ টাকা। বছরের হিসাব ধরলে ক্ষতির পরিমাণ ১৪কোটিরও বেশি। গোটা মহকুমায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে বছরে প্রায় ৩৬কোটি টাকা। মাঝে লাগাতার হানা দেওয়ায় রাজস্ব ক্ষতি ২৫-৩০ শতাংশ কমানো গিয়েছিল। করোনা-পরিস্থিতিতে নজরদারি কমায় ফের ক্ষতি বেড়েছে।’’ আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এক লিটার চোলাই বিক্রি হওয়ার অর্থ সম পরিমাণ দিশি বা বিদেশি মদ বিক্রি না-হওয়া। এই হিসাব ধরলে দেখা যাবে, প্রতি লিটার চোলাই বিক্রির জন্য সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ১০০ টাকা।’’

চোলাই রুখতে কী করছে প্রশাসন?

আবগারি দফতরের দায়িত্বে থাকা হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নিখিলেশ মণ্ডল বলেন, “অভিযান চলছে। তা আরও বাড়ানো হবে।” পুরশুড়া ছাড়াও খানাকুলের দু’টি ব্লকের মাড়োখানা, হানুয়া, ঘোষপুর, পোল, হেলান, পাতুল, গোঘাটের বদনগঞ্জ, ফলুই, বালি, আরামবাগের বাতানল, পুইন, তিরোল, সতীতলা, বাঁধপাড়ার মতো জায়গায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার চলছে। খানাকুলের মাড়োখানার এক দিনমজুরের কথায়, “চোলাই কিনতে রেশনের চাল বিক্রি করি। বাড়িতে অশান্তিও হয়।” পুলিশ এবং আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, মহকুমার ৬টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকার সাড়ে সাতশো গ্রামের মধ্যে অন্তত আড়াইশো গ্রামে চোলাই তৈরি হয়। রাউতাড়ার মতো গোঘাটের মথুরা এবং আরও কিছু এলাকায় চোলাই কারবার যেন 'কুটির শিল্পে'র আকার নিয়েছে। ওই সমস্ত গ্রাম থেকে সংলগ্ন বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামে চোলাই যায়। চোলাইয়ের কারবার চলে যে গ্রামগুলিতে, সেখানকার ৯০ শতাংশ বাসিন্দাই দিনমজুর। গোঘাটের ভিকদাসের বীণা দাস নামে এক মহিলার অভিযোগ, “চোলাই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে পুলিশ এবং আবগারি দফতর উদাসীন। গায়ে-গতরে না-খাটলে আমাদের এলাকার ৯০ ভাগ মানুষের পেট চলে না। যেটুকু আয় হয়, তা চোলাই খেয়ে খরচ করে অনেকে। অনেক বাড়িতেই এ নিয়ে অশান্তি-মারধর লেগে আছে।”

চোলাই মদের রমরমার কথা স্বীকার করে মহকুমা আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “চোলাই রুখতে দৈনিক নজরদারি চালানোর মতো লোকবল ও গাড়ি নেই। দফতরের পরিকাঠামোও পর্যাপ্ত নয়। তাই অভিযান চালালেও অনেক জায়গায় ফের ঠেক চালু হয়ে যায়। স্থানীয় মানুষ সচেতন না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা ঘুচবে না।”

Hooch Dens Hooch Pursurah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।