ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে এ পর্যন্ত একবার শাসকদলের জেলা সভাপতি বদল হয়েছে। বদল হয়েছে ব্লক সভাপতির। পাল্টেছে বিধায়ক। এ তল্লাটে বিরোধী গেরুয়া শিবির প্রভাব বিস্তার করেছে (লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী)। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও আরামবাগের হরিণখোলায় (এলাকাটি পুরশুড়া বিধানসভার অন্তর্গত) তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হানাহানিতে ছেদ পড়েনি। কবে, কোন পথে এলাকায় শান্তি ফিরবে, জানেন না কেউ।
এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের ঘোলতাজপুরে তৃণমূল যুব সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে মূল সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের বোমাবাজিতে মৃত্যু হয়েছিল শেখ ইসরাইল খানের। তৃণমূলের ওই যুবকর্মীর দাদা ইসমাইল খান থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ১৫ জনের নামে। তার ভিত্তিতে শুক্রবার পুলিশ হিদায়েত আলি, ইদ্রিশ আলি, শেখ সম্রাট বাবর এবং সামসুর রহমান নামে চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। হিদায়েত, ইদ্রিশ এবং বাবর ঘোলতাজপুরেরই বাসিন্দা। সামসুরের বাড়ি ওই পঞ্চায়েত এলাকারই আমগ্রামে।
পুলিশ জানায়, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ তাইবুল আলি (তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের অঞ্চল সভাপতি) পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। ধৃতদের আজ, শনিবার আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হবে। ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এলাকার সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, এর আগেও একাধিক হানাহানির ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তাতে রক্তপাতে লাগাম পরেনি। ফলে, এ ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও অশান্তি বন্ধ হওয়ার আশা দেখছেন না তাঁরা। ইসরাইল খুনে মূল অভিযুক্ত শেখ তাইবুল গত বছরই এক দলীয় কর্মীকে খুনে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। গ্রেফতার করা হলেও তিনি জামিন পান।
খুনের খতিয়ান
• ১৯ অক্টোবর, ২০১১: পূর্ব কৃষ্ণপুরের তৃণমূল নেতা পার্থ হাজারিকে না-পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা।
• ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫: পুর্ব কৃষ্ণপুরের তৃণমূল কর্মী সাদে মালিক খানকে পিটিয়ে হত্যা।
• ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮: মধুরপুর গ্রামে তৃণমূল নেতা মুক্তার শেখ খুন।
• ৮ জুন, ২০১৯: মুক্তার খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ মফিজুলকে পিটিয়ে হত্যা।
• ৬ অগস্ট, ২০২০: ঘোলতাজপুরে বোমাবাজিতে হত যুবকর্মী শেখ ইসরাইল খান।
দশ বছরে ইসরাইলকে নিয়ে এ পর্যন্ত হরিণখোলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হলেন পাঁচ জন। এ ছাড়া, কত যে মারধর, হাত-পা ভেঙে দেওয়া, গুলি-বোমায় জখম হওয়ার ঘটনা রয়েছে, তার পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পুলিশ। কেন লাগাম পরছে না রক্তপাতে?
জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবে দাবি, ‘‘বাম আমল থেকেই হরিণখোলার দু’টি অঞ্চলে এই সমস্যা থেকে গিয়েছে। আমাদের তা ভাবিয়েও তুলেছে। এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে সব পক্ষের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসব। রাজনৈতিক ভাবেই সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।” পুরশুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “হরিণখোলা নিয়ে দল যদি এখনও না ভাবে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ না করে, তা হলে আরও অঘটন ঘটবে।” এটা ঠিকই, ১৯৮০ সাল থেকে বালিখাদের দখল নিয়ে হরিণখোলা-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় সংঘর্ষ এবং খুন হয়ে চলেছে। বাম আমলে কোনও অশান্তির পিছনে ছিল শরিকি দ্বন্দ্ব, কোনওটি গোষ্ঠী-কোন্দল, এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। রাজ্যে পালাবদলের পরে তাঁরা ভেবেছিলেন, এলাকায় শান্তি ফিরবে। কিন্তু তা হয়নি। বৃহস্পতিবারের গোলমালে এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। দু’টি অঞ্চলের মূল কেন্দ্র মুণ্ডেশ্বরী নদীর গায়ে হরিণখোলা বাজারটি। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, “বাজারের তৃণমূল কার্যালয়টিই যত অশান্তির মূলে। দুই গোষ্ঠীর কারা কখন দখল করবে, কেউ জানে না।
আগে ছিল বালিখাদকে কেন্দ্র করে অশান্তি। এখন বালিখাদ নেই, লুটেপুটে খেতে রাস্তার গাছ বিক্রি, তোলা আদায় এবং সর্বোপরি পঞ্চায়েতে খবরদারি করা নিয়ে অশান্তি লেগেই রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy