Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Adhar Card

আধার-তথ্য সংশোধনে নাজেহাল মানুষ

আধার কার্ডে নাম বা অন্য তথ্য সংশোধন করাতে নাকাল হচ্ছেন হাওড়া গ্রামীণ জেলার হাজার হাজার মানুষ। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১৩
Share: Save:

আধার কার্ডে নাম বা অন্য তথ্য সংশোধন করাতে নাকাল হচ্ছেন হাওড়া গ্রামীণ জেলার হাজার হাজার মানুষ।

শুধু নাম সংশোধনই নয়, এক সময়ে ডাকঘরগুলি থেকে নতুন আধার কার্ডও দেওয়া হত। কিছু ব্যাঙ্কেও তৈরি হতো আধার কার্ড। সেখানে কার্ডের তথ্য সংশোধনও করা হত। কিন্তু লকডাউন-এর সময়ে সব বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন প্রত্যাহারের পরে ফের ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরগুলিতে আধার কার্ড তৈরি এবং সংশোধনের কাজ শুরুর নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। হাওড়া শহরে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে সেই কাজ শুরুও হয়। গ্রামীণ এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি বাদ দিয়ে বাকি ডাকঘর এবং ব্যাঙ্কে সেই কাজ চালু হয়নি।

আধার কার্ডে নাম সংশোধনের জন্য দিনের পরে দিন ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে দৌড়চ্ছেন শ্যামপুরের চাঁপাবাড় গ্রামের ষাটোর্ধ সোফিয়া বিবি। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। আধার কার্ডে ভুল তথ্য থাকায় বার্ধক্যভাতা পাচ্ছেন না সোফিয়া। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শিবিরে গিয়ে বার্ধক্যভাতার কাগজপত্র জমা দিলাম। কিন্তু আধার কার্ডে নাম ভুল থাকায় তা গ্রাহ্য হল না।’’ শুধু সোফিয়াই নন, একই সমস্যা তাঁর মতো আরও অনেকের। এখন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে চাইলে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক, যে সব শ্রমিক কর্মচারী প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা তুলতে চান, তাঁদের আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল ফোনের নম্বরের সংযোগ অবশ্যই থাকা দরকার। কিন্তু বেশির ভাগ ডাকঘর এবং ব্যাঙ্কে আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজ শুরু না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরাও। শ্যামপুর ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আতিয়ার খান বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজ করা যাচ্ছে না বলে বহু মানুষ দালালদের মাধ্যমে শহরের ডাকঘরগুলি থেকে কার্ড সংশোধন করিয়ে আনছেন। এতে তাঁদের বহু টাকা খরচ হচ্ছে। আমাদের এখানে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শ্যামপুর শাখায় আধার কার্ডের কাজ লকডাউন-এর পরে শুরু হয়েছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। শ্যামপুর ডাকঘরে লকডাউন-এর আগে ওই কাজ হত। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে তা শুরু হয়নি।’’

শুধু শ্যামপুর নয়, মুগকল্যাণ, বাগনান, বাউড়িয়া— সর্বত্রই চিত্রটা এক। আমতা ডাকঘরে আধার কার্ড তৈরি এবং সংশোধনের কাজ হলেও দিনে ২০ জনের বেশি মানুষ সেই পরিষেবা পাচ্ছেন না। ভোর থেকে ডাকঘরের সামনে লাইন পড়ছে রোজ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা আমতা ১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘আধার কার্ডে নাম সংশোধনের জন্য আমরা পঞ্চায়েত থেকে রোজ ভুরিভুরি শংসাপত্র দিচ্ছি। কিন্তু যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরা ফিরে এসে আমাদের কাছে নালিশ করছেন, ডাকঘরে বিশাল লম্বা লাইন পড়ছে। তাই আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজ করাতে তাঁরা পারছেন না।’’ আধার কার্ড শুধু সরকারি পরিষেবা পাওয়ার জন্যই লাগে, তা নয়। বহু মানুষ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বার বার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, নয়া নাগরিকত্ব আইন বলবৎ করা হবে। এই প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে যাতে নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য বহু মানুষ আধার কার্ডে থাকা ভুল তথ্য সংশোধন করিয়ে নেওয়ার জন্য ডাকঘর বা ব্যাঙ্কে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের মুখে এই আশঙ্কার কথা বেশি শোনা গিয়েছে।

জেলা লিড ব্যাঙ্কের এক কর্তা জানান, কয়েকটি ব্যাঙ্কে আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার ডাকঘরকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পরে ব্যাঙ্কগুলি আর সেই কাজ করতে চাইছে না। হাওড়া জেলার সিনিয়র সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পোস্ট অফিসের এক কর্তা জানান, লকডাউন-এর পরে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। শহরের সব ডাকঘরেই কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার কয়েকটি ডাকঘরে কাজ চলছে। বাকিগুলিতে এক মাসের মধ্যেই শুরু হবে। উন্নত মানের যন্ত্রপাতি বসছে। কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। আমতা ডাকঘরের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানান, ওখানে একটি মাত্র যন্ত্রে কাজ হচ্ছে। অতিরিক্ত যন্ত্র পাঠানো হবে। তখন বেশি মানুষ আধার কার্ড তৈরি বা সংশোধন করাতে পারবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Adhar Card Harrasment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE