Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শস্য-ভাণ্ডার বাঁচবে তো, প্রশ্ন গ্রামবাসীর

রূপনারায়ণের খাল ও বাঁধ সংস্কারের দাবিও জোরালো হচ্ছে চাষের খেত বাঁচানো নিয়ে গ্রামবাসী আরও বেশি চিন্তায়। শ্যামপুর হাওড়া জেলার ‘শস্য ভাণ্ডার’ বলে চিহ্নিত। জেলায় এখানেই সবচেয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হয়।

শ্যামপুরে রূপনারায়ণ বাঁচাও কমিটির পদযাত্রা।

শ্যামপুরে রূপনারায়ণ বাঁচাও কমিটির পদযাত্রা।

নুরুল আবসার 
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

ভরা বর্ষায় রূপনারায়ণের দিকে তাকালে বুক কেঁপে ওঠে গোঁজলা গ্রামের প্রণতি হাজরার। বহুদিন সংস্কার না-হওয়া সঙ্কীর্ণ বাঁধটা ভেঙে পড়বে না তো!

‘‘বর্ষায় রূপনারায়ণ দেখলে মনে হয় যেন সব ভেঙেচুরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের।’’— নদীবাঁধে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার এই আশঙ্কার কথা জানালেন শ্যামপুর-২ ব্লকের ওই গ্রাম্য মহিলা। তাই রূপনারায়ণ সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা এ দিন সকালে ওই গ্রামে এসে পৌঁছতেই তাতে শামিল সকলকে আটচালায় বসিয়ে ঘুঘনি, মুড়ি, পাঁপড় এবং চা খাওয়ালেন প্রণতিদেবী এবং তাঁর মতো আরও কয়েকজন। কারণ, রূপনারায়ণ সংস্কারের দাবি তো তাঁদেরও।

প্রণতিদেবীর কথায়, ‘‘আমরা পদযাত্রায় শামিল হইনি। কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই তো এই আন্দোলন। তাই যাঁরা পদযাত্রা করছেন, তাঁদের মুখে সামান্য কিছু তুলে দেওয়ার জন্য আমরা গ্রামবাসীরা বাড়ি বাড়ি চাঁদা তুলে খাবারের আয়োজন করেছি।’’

শ্যামপুর-২ ব্লকের নাকোল, শশাটি, ডিহিমণ্ডলঘাট-১ ও ২ আর শ্যামপুর-১ ব্লকের কমলপুর, রাধাপুর— এই সব পঞ্চায়েত ঘেঁষে বইছে রূপনারায়ণ। কয়েকটি জায়গায় মেরামতির অভাবে বাঁধ ধসেছে। কিছু জায়গায় বাঁধ সঙ্কীর্ণ। যেমন নাকোল পঞ্চায়েতের ধুধুটি। এখানে ‘দ’-এর মতো বাঁক নিয়েছে রূপনারায়ণ। বাঁধের অনেকটা অংশ ধসে গিয়েছে। মনে হয় বাঁধ ভেঙে যে কোনও মুহূর্তে লোকালয়ে ঢুকে পড়বে নদ। এখান থেকে বাঁধ ধরে রাধাপুর পর্যন্ত গেলে বিভিন্ন জায়গায় একই ছবি।

গ্রামবাসীদের উদ্যোগে আন্দোলনকারীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা। ছবি: সুব্রত জানা

ডিহিমণ্ডলঘাট-২ পঞ্চায়েতের যোগখামারির কাছে নদীবাঁধ এতই সঙ্কীর্ণ যে সাইকেল আর মোটরবাইক ছাড়া আর কিছু যেতে পারে না। যোগখামারি থেকে তমলুক পর্যন্ত খেয়া চলে। কিন্তু নদে চর পড়ায় ভাটার সময়ে সরাসরি যাওয়ার উপায় নেই। চরে খেয়া বদলাতে হয় গ্রামবাসীকে। জোয়ারের সময় বন্ধ থাকে ফেরি পরিষেবা।

চাষের খেত বাঁচানো নিয়ে গ্রামবাসী আরও বেশি চিন্তায়। শ্যামপুর হাওড়া জেলার ‘শস্য ভাণ্ডার’ বলে চিহ্নিত। জেলায় এখানেই সবচেয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হয়। কিন্তু রূপনারায়ণের অসংখ্য খাল সংস্কার হয় না দীর্ঘদিন। খালগুলি কাটা হয়েছিল বর্ষার সময়ে নিকাশির জন্য এবং শুখা মরসুমে স্লুইস গেট দিয়ে রূপনারায়ণের জল ঢুকিয়ে বোরো চাষের জন্য। কিন্তু খালগুলি সংস্কার না হওয়ায় গ্রামবাসীদের এখন উভয় সঙ্কট। বর্ষায় খাল উপচে জল ঢুকে পড়ে জমিতে। ফলে, নিকাশি বন্ধ। জমা জলে ধান গাছের গোড়া পচে যায়। শুখা মরসুমেও খাল দিয়ে জল ঢুকতে পারে না।

শসাটি গ্রামের চাষি অরুণ দলুই বলেন, ‘‘আমি এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। আমনের সময়ে জমিতে জল জমে যাওয়া ও বোরো মরসুমে জল না-ঢোকার জন্য সমস্যায় পড়ি। খালগুলি অবিলম্বে সংস্কার করা দরকার। না হলে চাষের ক্ষতিই ভবিতব্য ’’ গ্রামবাসীরা মনে করছেন, যাবতীয় সমস্যার মূলে রয়েছে নদ এবং নদীবাঁধ সংস্কার না-হওয়া। এর জেরে বিশাল জনপদ একদিন বিপদে পড়বে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা।

ওই নদ সংস্কারের দাবিতে গত ২৬ নভেম্বর থেকে বাঁধ ধরে পদযাত্রা করছে ‘রূপনারায়ণ বাঁচাও কমিটি’। ৩০ নভেম্বর গাদিয়াড়ায় ওই পদযাত্রা শেষ হওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার পদযাত্রা শুরু হয় নাকোল পঞ্চায়েতের গোপীনাথপুর থেকে। এ দিন নেতৃত্বে ছিলেন মহেন্দ্র রায়। তিনি বলেন‌, ‘‘সব জায়গাতেই গ্রামবাসীর সাড়া মিলছে। এ থেকেই বোঝা যায় মানুষ সমস্যার কথা বুঝেছেন।’’

‌শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার মোল্লা বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ প্রকল্পে সেচ খালগুলির আমূল সংস্কারের কাজ শুরু হবে। প্রকল্প তৈরি হয়েছে।’’ সেচ দফতর জানিয়েছে, নদ বাঁচানোর জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

RupNarayan Rupnarayan River River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy