একাই স্কুলে যাচ্ছিল সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েটি। কারণ অন্যদিনের মতো এ দিন তারই স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির দুই পড়ুয়া তার সঙ্গে ছিল না। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে ফাঁকা রাস্তায় হঠাত্ই ওড়নায় মুখ ঢাকা তিন যুবক তার পথ আটকে ওই দুই ছাত্রীর সম্পর্কে জানতে চায়। বলতে না চাওয়ায় মেয়েটির মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে ওই তিন যুবক। মারের চোটে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে রাস্তার পাশে কলাবাগানে ফেলে ওই যুবকের দল পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। বুধবার সকালে সিঙ্গুরের দিয়াড়ায় এই ঘটনায় আহত ছাত্রীর বাবা-মা ও এলাকার মানুষ শঙ্কিত। গুরুতর জখম ওই ছাত্রী হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। চিকিত্সকদের বক্তব্য, মাথায় জোরালো আঘাতের কারণেই সে জ্ঞান হারায়। ঘটনার আকস্মিকতায় মানসিক ভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সিঙ্গুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। আক্রান্ত কিশোরীর সঙ্গে পুলিশ কথা বলেছে। যে দুই ছাত্রীর সম্পর্কে ওই যুবকেরা জিজ্ঞাসা করছিল তাদের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে সব রকম চেষ্টা চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর তেরোর সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী দিয়াড়ারই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ে। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিল। অন্য দিন এলাকারই নবম এবং দশম শ্রেণির দুই ছাত্রীর সঙ্গে সে স্কুলে যায়। এ দিন ওই দুই ছাত্রী স্কুলে না যাওয়ায় সে একাই যাচ্ছিল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আশ্রমধার এলাকায় সাদা রঙের একটি সুমো গাড়ি নিয়ে তিন যুবক দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, ওড়না জাতীয় কিছু দিয়ে তিন যুবকেরই মুখ ঢাকা ছিল। তারা তার পথ আটকায় ও জিজ্ঞাসা করে অন্য দু’জন কোথায়। সে তাদের জানায়, তারা স্কুলে যাবে না। তখন ওই দু’জনের সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চায় ওই যুবকেরা। তাদের বাড়ি কোথায়, তাও জিজ্ঞাসা করে। ফোন নম্বর চায়। কিন্তু সে কিছুই বলতে রাজি না হয়ে স্কুলের পথে পা বাড়ায়। অভিযোগ, তখনই ভারী কিছু দিয়ে মেয়েটির মাথায় বাড়ি মারে যুবকদের একজন। আঘাতে ছাত্রীটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে রাস্তার পাশে কলাবাগানে ফেলে ওই যুবকেরা পালিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পরে স্থানীয় এক মহিলা এক স্কুলছাত্রীকে কলাবাগানে পড়ে থাকতে দেখে তাকে তুলে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে ওই ছাত্রী জানায়, মাথায় যন্ত্রণা করছে। তাকে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে চুঁচুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। সিঙ্গুর থানার ওসি অমিতকুমার মিত্র ইমামবাড়া হাসপাতালে গিয়ে ছাত্রীটি ও তার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, যে রাস্তায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি বেশ নির্জন। তারই সুযোগ নিয়ে ওই যুবকেরা অন্য দুই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। যুবকদের মুখ ঢাকা থাকায় এবং তারা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করায় পুলিশের সেই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, এমন হতে পারে, যাদের খোঁজে ওরা এসেছিল তাদের দেখতে না পেয়ে এবং ওই কিশোরী কিছু বলতে না চাওয়ায় যুবকেরা খেপে যায়।”
আক্রান্ত ছাত্রীর বাবা লিলুয়ায় ছোটখাট কাজ করেন। তিনি বলেন, “এমন যে ঘটতে পারে কল্পনাও করতে পারিনি। পুলিশ যেন দোষীদের ধরে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে।” ছাত্রীর মায়ের কথায়, “গ্রামবাসীরা মেয়েকে দেখতে না পেলে কি হত কে জানে! মেয়ে শুধু বলছিল, ওর মাথায় প্রচণ্ড জোরে মেরেছে।” ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকাতেও। পড়শি এক গৃহবধূ বলেন, “দিনের বেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে যদি এ ভাবে একটি মেয়ের উপর আক্রমণ হয়, তা হলে নিরাপত্তা কোন জায়গায় পৌঁছেছে তা বোঝাই যাচ্ছে।” পুলিশ অবশ্য নিরাপত্তার অভাবের কথা মানতে নারাজ। পুলিশের বক্তব্য এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
নিরাপত্তার অভাবের কথা পুলিশ মানতে না চাইলেও, ঘটনা হচ্ছে মাস তিনেক আগে এই এলাকাতেই স্থানীয় এক তরুণীর উপরে অ্যাসিড হামলা হয়। কল-সেন্টারের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে কে বা কারা তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালায়। দু’টি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তরুণীর। এ দিন তরুণী জানান, চিকিত্সার পরে বাঁ চোখের দৃষ্টি কিছুটা ফিরলেও ডান চোখে এখনও তিনি দেখতে পান না। তাঁর পরিবারের ক্ষোভ, এত দিনেও ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সূত্রের খবর, পুলিশের কাছে এক যুবকের নাম জানিয়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁর বক্তব্য, ওই যুবকই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশকে জানান তিনি। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরেনি। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে পুলিশের বক্তব্য, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ওই ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy