দূষণ: ভাগাড়ের আগুনের কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। সোমবার, হাওড়ার বেলগাছিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
তিন দিন ধরে আগুন জ্বলছে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের জঞ্জালের স্তূপে। দেখে মনে হবে, যেন দাবানল লেগেছে পাহাড়ে। ওই আগুনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষণ ছড়াচ্ছে হাওড়া পুরসভার সাত ও আট নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ধোঁয়ার উৎকট গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, জঞ্জালে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস থেকে আগুন লেগেছে। সোমবার দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে গেলেও পাহাড়ের মতো উঁচু ভাগাড়ের উপর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ বার তাই রিলে পদ্ধতিতে জল নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
বেলগাছিয়া ভাগাড়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মেট্রিক টন জঞ্জাল ফেলা হয়। ওই ভাগাড়ের ধারণ ক্ষমতা অবশ্য ১৫ বছর আগেই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট প্রায় এক দশক আগে বিকল্প জায়গা খুঁজে নতুন ভাগাড় তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ অবশ্য আজও কার্যকর করা হয়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন প্রতিদিন শহরের সমস্ত জঞ্জাল ওই ভাগাড়েই ফেলা হয়। যার ফলে বেলগাছিয়া ভাগাড় বর্তমানে প্রায় বারোতলা বাড়ির সমান এক অতিকায় স্তূপে পরিণত হয়েছে। আর ওই আবর্জনার অভ্যন্তরে জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাস থেকে প্রায়ই সেখানে আগুন লেগে যাচ্ছে। বর্ষায় জঞ্জালের পাহাড়ে নামছে ধস। যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কার প্রহর গোনেন এলাকার বাসিন্দারা।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জঞ্জালের স্তূপের ভার কমাতে একাধিক বার উদ্যোগী হয়েছে হাওড়া পুরসভা। জঞ্জাল থেকে জৈব গ্যাস তৈরির জন্য জার্মানি থেকে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আনা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্প মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি অন্য একটি সংস্থার মাধ্যমে ‘বায়ো মাইনিং’ পদ্ধতিতে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করে জঞ্জাল কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পের জন্য দু’বার দরপত্র ডাকা হলেও কোনও সংস্থা সাড়া দেয়নি। ফলে সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। বেলগাছিয়া ভাগাড় নিয়ে কী করা হবে, আপাতত প্রশাসনও তা নিয়ে অন্ধকারে। তবে এলাকাবাসী প্রচণ্ড বিরক্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রান্তিক কাঁড়ার বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে আগুন জ্বলছে। পুরসভার কোনও হুঁশ নেই। ধোঁয়া আর উৎকট পচা গন্ধে বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে বসে থাকতে হচ্ছে।’’ অন্য এক বাসিন্দা সমরেন্দ্র মল্লিকের কথায়, ‘‘দূষিত ধোঁয়ার গন্ধে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এ রকম প্রতি বছরই হয়। এ থেকে কী করে রেহাই পাব, জানি না।’’
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ সম্পর্কে হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বললেন, ‘‘এ দিনও দমকলের দু’টি গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এত উঁচুতে আগুন জ্বলছে যে, দমকলের সেই গাড়ি সেখানে উঠতে পারছে না। তাই দমকল এ বার ‘রিলে’ পদ্ধতিতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি, আগামী দু’-এক দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy