জ্বলছে মাছ ধরার নৌকা। বৃহস্পতিবার শ্যামপুরের দেউলি গ্রামের হুগলি নদীর পাড়ে। ছবি: সুব্রত জানা
দাউদাউ করে জ্বলছে আস্ত একটি নৌকা। প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছেন সওয়ার মৎস্যজীবীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্যামপুরের দেউলি গ্রামের বাসিন্দারা হুগলি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন এই দৃশ্য।
দেউলি গ্রামের রামকৃষ্ণ সাঁতরা পেশায় মৎস্যজীবী। নৌকায় করে সাগরে যান মাছ ধরতে। এ দিন সঙ্গে ন’জনকে নিয়ে সাগরে যাবেন বলে নৌকা ভাসিয়েছিলেন হুগলি নদীতে। পাড় ঘেঁষে কিছুটা এগোতেই মাথার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে আসে নৌকার উপরে টাঙানো ওয়্যারলেস রেডিয়োর অ্যান্টেনা। সঙ্গে সঙ্গে শয়ে শয়ে আগুনের ফুলকি এসে পড়তে থাকে নৌকায় রাখা নাইলনের জালের স্তূপে। জ্বলে ওঠে জালগুলি। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশে রাখা ডিজেলের ড্রামে। তারপর গোটা নৌকাটি চলে আসে আগুনের গ্রাসে। পাড়ে দাঁড়িয়ে তখন চিৎকার করছেন গ্রামবাসী। দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে নৌকাটি। সব কিছু এত দ্রুত ঘটে যায় যে, কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না নৌকায় সওয়ার দশ মৎস্যজীবী। নৌকাটি তখন এগিয়ে গিয়েছে পাড় থেকে বেশ কিছুটা দূরে। প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেন তাঁরা। তারপর একে একে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। আগুনে অল্প বিস্তর জখম হন রামকৃষ্ণ-সহ দু’জন। পাড় থেকে দেখা যায়, জ্বলন্ত নৌকাটি আস্তে আস্তে গ্রাস করে নিল নদী।
সেই দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে গলা কাঁপছিল রামকৃষ্ণের ছেলে সৌম্যর। বললেন, ‘‘ভরা কটালে জলের তোড়ে নৌকাটি নদীর পাড় ছাড়িয়ে জমিতে উঠে এসেছিল। এ দিনই সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা ছিল বাবার। নৌকা ভাসাবার আগে পুজো হয়। পুজো শেষে নৌকাটি পাড় ধরে কিছুটা এগোতেই ঘটনাটি ঘটে। ভয়ঙ্কর সে দৃশ্য।’’
সৌম্য জানান, এই ঘটনায় তাঁদের প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। মহাজনের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা সারিয়েছিলেন রামকৃষ্ণবাবু। সাগরে কয়েক দিন থাকতে হবে বলে প্রায় ২০০ লিটার ডিজেল মজুত করা ছিল নৌকায়। ছিল বেশ কয়েকটি মাছ ধরার জাল।
সৌম্য বলেন, ‘‘অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ওঁরা। এমন ঘটনা আগে কোনও দিন ঘটেনি এখানে। নৌকাটি পাড়েই বাঁধা ছিল। ভরা কটালে জলের তোড়ে সেটি অনেকটা উঠে আসে। নৌকা ছাড়ার পরে কেউ খেয়াল করেননি, অ্যান্টেনাটি বিদ্যুতের তারের কাছাকাছি চলে এসেছে।’’
আহত দু’জনকে স্থানীয় ঝুমঝুমি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছেছিল পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আগে কোনও দিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy