এ সব জমির চরিত্র বদল চলছে। —নিজস্ব চিত্র
কৃষি জমিকে বেআইনিভাবে ছোট ছোট প্লটে বিক্রির অভিযোগ তুলছেন বৈদ্যবাটী এলাকার চাষিরা। সেই জমির অপরিকল্পিত চরিত্র বদল করার ফলে এলাকায় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কালঘাম ছুটেছে পুর-কর্তৃপক্ষের।
বৈদ্যবাটী পুরসভার বয়স দেড়শো বছর পেরিয়েছে। শ্রীরামপুর নওগাঁ থেকে শুরু করে শেওড়াফুলি এবং বৈদ্যবাটী শহর নিয়ে পুরসভার চৌহদ্দি। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে শহরাঞ্চলে মাথা তুলছে কংক্রিটের জঙ্গল। সেইসঙ্গে কৃষি জমিতে থাবা বসিয়েছে প্রমোটাররা। যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে নতুন জনবসতি। আর অপরিকল্পিত জনবসতি ওঠার ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে উন্নয়ন ব্যবস্থা।
বৈদ্যবাটী পুর এলাকায় ওয়ার্ড সংখ্যা ২৩। তার মধ্যে ৪, ৮, ১১, ১৪, ১৭, ১৮, ২০, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিস্তীর্ণ এলাকা কৃষিজমি। ওইসব ওয়ার্ডগুলির পম্পা নগর, সোনালি পার্ক, বিদ্যাসাগর পল্লি, রাজারবাগান নিচুমাঠ, চক, নতুনপাড়া এনসি ব্যানার্জি রোড, রামমোহন সরণি গোলাপবাগ নিচুমাঠ, শাসমলপাড়া ও কাজীপাড়া এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে চাষের জমির চরিত্র বদল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বছরভর এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কী ভাবে হচ্ছে জমির এই চরিত্র বদল?
জানা গিয়েছে, এলাকার অনেক চাষি তাঁদের চাষের জমি প্রোমোটারের হাতে তুলে দিচ্ছেন। সেখানে আবাসন তৈরির পর বদলে দেওয়া হচ্ছে জমির চরিত্র। খেত জমি বদলে যাচ্ছে বাস্তু জমিতে।
পুরসভার বিদায়ী ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর মানোয়ার হোসেনের অভিযোগ, "পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী এক বিঘার বেশি জমি প্লট করতে পুরসভা অনুমতির প্রয়োজন। কিন্তু জমির প্রোমোটার সেই নিয়ম মানছে কই। এক রাস্তার সঙ্গে অন্য রাস্তার যোগাযোগ থাকছে না। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ আনতে অসুবিধা হচ্ছে। বাড়ি করার পর সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা।"
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, "জমি কেনার পর পুরসভাকে মিউটেশনের সময় জমির দামের উপর সারচার্জ, বাড়ি করার সময় উন্নয়নের টাকা সবই দিতে হয়। কিন্তু এলাকার উন্নয়নের দেখা নেই। বছরভর বাড়ির চারদিকে জমে আছে জল। সেটা মশা মাছির আঁতুড়ঘর।"
কৃষিজমি বাঁচানোর দাবি ও দূষণমুক্ত পরিবেশ রাখতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বৈদ্যবাটী চক ও দীর্ঘাঙ্গ মৌজা কৃষি উন্নয়ন সমিতি। সমিতির সম্পাদক রামচন্দ্র ঘোষ বলেন, "২০১৬ সাল থেকে পুরসভার বর্তমান প্রশাসক তথা তৎকালীন পুরপ্রধান একাধিকবার ধান মাঠ পরিদর্শন করেছেন। বলেছিলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে কৃষি জমি প্লট করা হলে সেই জমির মিউটেশন বন্ধ করবেন। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি।"
পুরপ্রশাসক অরিন্দম গুঁইন বলেন, "মাস্টারপ্ল্যান অনুমতি ব্যতীত এক বিঘার বেশি জমির প্লটিং করা যাবে না। জমি প্রোমোটাররা নন, চাষিরা বিক্রি করেন। মিউটেশন ও প্ল্যান ছাড়া পুরসভাকে উপেক্ষা করে ওইসব এলাকায় বাড়ি ঘর তৈরি হচ্ছে। জমির চরিত্র বদলের ছাড়পত্র দেয় ভূমি সংস্কার দফতর।"
এ বিষয়ে শ্রীরামপুর উত্তরপাড়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী জমির চরিত্র বদল করা হয়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান অথবা পুরপ্রধানের থেকে অনুমতি নেওয়া হয়ে থাকে। যদি অনুমতি না নিয়ে আগেই অবৈধভাবে জমির চরিত্র বদল করে ফেলেন, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy