কল্যাণ রায়চৌধুরী।
বছর দশেক আগে কাটমানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার করেছিলেন। অভিযোগের বাক্স বসিয়েছিলেন। পোস্টার ঝুলিয়েছিলেন নানা জায়গায়।
তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন দলেরই মহিলা কর্মীদের একাংশ। তিনি দমেননি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পদত্যাগের নির্দেশ তিনি মানেননি। আর এ সবের জন্য এখন দলে তাঁর কার্যত ‘একঘরে’ অবস্থা বলে অভিযোগ তুললেন জগৎবল্লভপুরের পাতিহাল পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান কল্যাণ রায়চৌধুরী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটমানি-বার্তায় যখন তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য, তখন কল্যাণবাবু মনে করছেন, ‘দিদি ঠিক কাজ করেছেন। অনেক আগে করা উচিত ছিল। রাজনীতি পয়সা কামানোর যন্ত্র নয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কাটমানি বন্ধ করতে গিয়ে দলেরই একটা অংশের কাছে খারাপ হয়ে যাই। এখন আমি দল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। শুধু লোকসভা ভোটে দলের কাজে ডাক পেয়েছিলাম। তারপর আবার যে-কে সেই! কেউ যোগাযোগ রাখেন না।’’
কল্যাণবাবু দু’দফায় প্রায় আট বছর প্রধান ছিলেন। প্রথম দফায় ২০০৩-২০০৮ সাল পর্যন্ত। তাঁর লক্ষ্য ছিল স্বচ্ছ ভাবে পঞ্চায়েত চালানো। গরিব মানুষ যাতে বিনামূল্যে সরকারি পরিষেবা পান, সে জন্য পঞ্চায়েত সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে সেই সময়ে তিনি দলের একাংশের বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসে। জিতে যান কল্যাণবাবুও। কিন্তু তাঁকে প্রধান করা হয়নি। যিনি প্রধান হন, সেই সুজাতা মণ্ডলের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দুর্নীতির অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ সদস্য। সুজাতা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিলেও অনাস্থা ভোটে হেরে যান। ফের প্রধান হন কল্যাণবাবু। এ বার কাটমানি-তোলাবাজির বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেন তিনি।
পঞ্চায়েত অফিসে, হরিসভা, বারোয়ারিতলায় পোস্টার ঝুলিয়ে দেন কল্যাণবাবু। অভিযোগ জানানোর বাক্সও বসানো হয়। এই পর্বেই দলের তরফে তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে কল্যাণবাবুর অভিযোগ। এমনকি, দলের মহিলা কর্মীদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়ের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানান। তাঁর ভিত্তিতে মুকুলবাবু তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলেও কল্যাণবাবু মানেননি। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে দল আর তাঁকে টিকিট দেয়নি।
কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘দ্বিতীয়বার প্রধান হয়ে দেখি, ইন্দিরা আবাস যোজনার বহু প্রাপক প্রথম কিস্তির টাকা পেলেও কিছু করতে পারেননি। ছিটেবেড়ার ঘরে ইন্দিরা আবাস যোজনার বোর্ড ঝোলানো। জানতে পারি, উপভোক্তাদের প্রথম কিস্তির টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকলেও তা দলের নেতাদের একাংশ নিয়ে নিয়েছেন। ফলে, বাড়ি তৈরির প্রাথমিক কাজ হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে সেই টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করি। এটাই হয়তো আমার অপরাধ। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল।’’
গ্রামবাসীরাও জানিয়েছেন, কল্যাণবাবু নেতাদের কাটমানি খাওয়া রুখতে তৎপর ছিলেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছকু এক প্রবীণ তাঁর ইন্দিরা আবাস যোজনার ঘর দেখিয়ে বলেন, ‘‘প্রথম কিস্তির টাকা থেকে এক নেতাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। কল্যাণবাবুর কথামতো ওই টাকা উদ্ধার করে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাই।’’ আর এক গ্রামবাসী জানান, তাঁর ঘরে ঢোকার রাস্তায় দু’টি কালভার্ট দরকার ছিল। প্রথমটি করার সময়ে পঞ্চায়েতের অনুমতি পেতে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। তখন কল্যাণবাবু প্রধান ছিলেন না। দ্বিতীয় কালভার্ট করার সময়ে কল্যাণবাবু প্রধান ছিলেন। টাকা ছাড়াই কাজ হয়।
এহেন কল্যাণবাবুর ‘লড়াই’ বা তাঁর আক্ষেপকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিকাশ ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘কাটমানি শব্দটাই তো ২০১০ সালে ছিল না। কল্যাণবাবু এটার বিরুদ্ধে লড়লেন কী ভাবে? তিনি এখন কী করছেন, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান কী— সেটাও জানি না। আমাদের কোনও আগ্রহও নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy