মৃত: মহম্মদ জলিল। নিজস্ব চিত্র
সকালে মহিলা ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট ফ্ল্যাটে ঢুকতেই বারবার ইশারায় পাশের ঘরের দিকে দেখাচ্ছিলেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত গৃহকর্ত্রী। সেই মতো মহিলা ওই ঘরে ঢুকে মুখ বাঁধা অবস্থায় গৃহকর্তাকে দেখেন। তত ক্ষণে অবশ্য শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের। অভিযোগ, ঘর থেকে লুট হয়েছে বেশ কয়েক হাজার টাকা-গয়না এবং টেলিভিশন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকালে হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার হরচাঁদ মুখার্জি লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বৃদ্ধের নাম মহম্মদ জলিল (৬৪)।
ঘটনাটি নিছকই ডাকাতি, নাকি এর পিছনে অন্য কিছু রয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধের অসুস্থ স্ত্রী জারিনা খাতুন অভিযোগ করেছেন শুক্রবার গভীর রাতে দু’জন যুবক তাঁদের ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁর স্বামীকে টেনে পাশের ঘরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে বাইরে বেরোননি ওই বৃদ্ধ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী ওই বৃদ্ধ তিন বছর আগে হরচাঁদ মুখার্জি লেনের ফ্ল্যাটটি কেনেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কও ছিল। বৃদ্ধা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বছর দেড়েক ধরে শয্যাশায়ী। স্পষ্ট ভাবে কথাও বলতে পারেন না তিনি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, প্রতি সকালে বৃদ্ধার জন্য এক জন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট আসতেন। তিন মাস অন্তর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ টাকা তুলে ঘরে রাখতেন বৃদ্ধ।
জারিনা তদন্তকারীদের যেটুকু জানিয়েছেন, তাতে বোঝা গিয়েছে শুক্রবার গভীর রাতে দরজায় ধাক্কা শুনে জলিল খুলে দেন। এর পরেই জারিনা যেখানে শুয়েছিলেন দুই যুবক সেই ঘরে ঢুকে পড়ে। দুষ্কৃতীরা কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জলিলকে পাশের ঘরে নিয়ে যায়। সেই ঘর সংলগ্ন বাথরুমে খালি গায়ে পিছনে দু’হাত মোড়া ও মুখ-নাক মোটা গেঞ্জি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মিলেছে জলিলের দেহ। জারিনা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটে ঢোকার কিছু ক্ষণ পরেই দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময়ে ফ্ল্যাটের সদর দরজা বাইরে থেকে টেনে দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, সকালে ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট গিয়ে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। তিনি লক ঘুরিয়ে ঢুকতেই জারিনা তাঁকে ইশারায় পাশের ঘরে যেতে বলেন। বৃদ্ধকে ওই অবস্থায় দেখে মহিলা প্রতিবেশীদের ডাকেন। খবর পেয়ে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা-সহ পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
তদন্তে জানা গিয়েছে, জলিলের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জারিনা। প্রথম পক্ষের ছেলে মাঝে মধ্যে বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা জানত যে জলিল টাকা তুলে ঘরে রেখেছেন এবং তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার বিষয়টিও তাদের জানা ছিল। এমনকি ওই পাঁচতলা আবাসনে ঢোকা-বেরনোর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, মূল গেট ভাঙা সেটাও দুষ্কৃতীদের অজানা ছিল না বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ফলে এই ঘটনায় পরিচিত যোগ থাকার দিকটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থলে থেকে কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেছেন ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞেরা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy