প্রতীকী ছবি।
পচা গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে উঠছিল!
কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও বাড়ির মালিকের কোনও হেলদোল ছিল না। বরং তিনি দাবি করতেন, কোথাও হয়তো ইঁদুর মরেছে। শেষে স্থানীয়েরা পুলিশ নিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখলেন, সেখানেও ‘রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া’!
তবে এখানে কোনও নিকট আত্মীয়ের মৃতদেহ দিনের পর দিন আগলে বসেছিলেন না গৃহকর্তা। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পোষ্যদের পচে-গলে যাওয়া দেহ নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী। শেষে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জোর করে ওই বাড়িতে ঢুকে উদ্ধার করলেন সেই সব মৃতদেহ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটেছে বালির কৈলাস ব্যানার্জি লেনে। পুলিশ জানায়, গৃহকর্তার নাম রমেশ বাগচী। তিনি এক সময়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, রমেশবাবু অবসর নেওয়ার পর থেকেই নিঃসন্তান ওই দম্পতিকে খুব একটা বাড়ির বাইরে দেখা যেত না। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও মিশতেন না তাঁরা। কিন্তু কেন জমিয়ে রাখতেন কুকুর-বিড়ালের দেহ? পুলিশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে রমেশবাবুর দাবি, ‘‘ওরা তো আমাদের ছেলে-মেয়ে, তাই ফেলিনি।’’
আপাত ভাবে অস্বাভাবিক ঘটনা মনে হলেও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পিছনে রয়েছে চূড়ান্ত মানসিক অবসাদ ও শূন্যতা। যেমন মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘বয়সের কারণে মানসিক অবসাদ এবং অবসরের পরের শূন্যতা মিলিয়ে ওই ব্যক্তির জীবনে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল। ওই দম্পতি নিঃসন্তান হওয়ায়, তাঁদের মনে অনেকটা জায়গা জুড়েই ছিল ওই পোষ্যরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পিতা-মাতা হিসেবে রমেশবাবুরা মানতে পারেননি যে, তাঁদের আগেই সন্তানেরা মারা যেতে পারে। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁদের আগলে রেখেছিলেন ওঁরা।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পচা গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা রমেশবাবুকে ডেকে জানতে চান, তাঁর বাড়ি থেকে কেন পচা গন্ধ বেরোচ্ছে? বাসিন্দাদের দাবি, ওই বৃদ্ধ তখনও দাবি করেন, ঘরে কোথাও হয়তো ইঁদুর মরে রয়েছে। কিন্তু রমেশবাবুর কথায় বিশ্বাস হয়নি স্থানীয়দের। তাঁদের সন্দেহ হয়, ওই বাড়ির ভিতরে ‘ভয়ঙ্কর’ কিছু একটা ঘটেছে। তা থেকেই এত পচা গন্ধ বেরোচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভু দাস বলেন, ‘‘আগেও বারবার ওঁকে বলেছি এই পচা গন্ধের বিষয়ে। প্রতি বারেই তিনি বলেছেন ইঁদুর মরেছে, ফেলে দেবেন। কিন্তু ইঁদুর মরলে তো আর এত গন্ধ বেরোতে পারে না। তাই বাড়ির ভিতরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নিই।’’
পুলিশ ও স্থানীয়েরা জানান, ওই দিন বিকেলে পচা গন্ধে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবেশীরা এবং স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা প্রথমে ওই বাড়িতে যান। বহু ডাকাডাকির পরে বৃদ্ধ নীচে নেমে এলেও সদর দরজা খুলতে রাজি হননি। শেষে দরজা খুললেও কেন, কীসের জন্য এলাকার লোক তাঁর বাড়িতে ঢুকবেন, তা নিয়েই বচসা জুড়ে দেন রমেশবাবু। এমনকী ‘আমার বাড়িতে বহু দামী জিনিষ আছে। কাউকে ঢুকতে দেব না।’ বলেও ওই বৃদ্ধ চেঁচামেচি জুড়ে দেন।
এর পরে এক প্রকার জোর করেই স্থানীয়েরা ও ক্লাবের সদস্যরা রমেশবাবুর বাড়িতে ঢুকে দোতলায় উঠে যান। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে হাজির হয় বালি থানার পুলিশ বাহিনীও। স্থানীয়েরা জানান, এত গন্ধ বেরোচ্ছিল যে, পুলিশ সহ প্রতিবেশীদের কয়েক জন অসুস্থ হয়ে নীচে নেমে আসেন। বাকিরা কোনও মতে রমেশবাবুর শোয়ার ঘরে ঢুকে চমকে ওঠেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শোয়ার ঘরের খাটের পাশেই কাগজের বড় বাক্সে প্লাস্টিকে জড়িয়ে রাখা রয়েছে তিনটি কুকুরের মৃত দেহ। খাটের নীচেও রয়েছে একটি বিড়ালের পচাগলা দেহ। মৃতদেহ থেকে যাতে গন্ধ না বেরোয়, তার জন্য ছড়ানো হয়েছে পাউডার। বন্ধ রয়েছে ঘরের জানালা। এর পরে রান্নাঘরের দিক থেকে গন্ধ বেরোতে দেখে পুলিশ ও স্থানীয় যুবকেরা সেখানে গেলে বাধা দেন রমেশবাবুর স্ত্রী। তিনি কিছুতেই তালা খুলতে রাজি হননি। শেষে মহিলা পুলিশ জোর করে তাঁকে দিয়ে তালা খুলিয়ে দেখেন অন্ধকার রান্নাঘরের ভিতরেও কাপড় মুড়িয়ে রাখা রয়েছে আরও দু’টি বিড়াল ও একটি কুকুরের দেহ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুরসভার সাফাই-কর্মীরা। কিন্তু তাঁরাও গন্ধের চোটে প্রথমে ভিতরে ঢুকতেই রাজি হচ্ছিলেন না। শেষে পুরসভার তিনটি গাড়ি এনে পুরো বাড়ি সাফ করতে হয়। সাফাই-কর্মীরা জানান, মৃতদেহগুলি পচে কালো
হয়ে মেঝের সঙ্গে প্রায় মিশে গিয়েছিল। বেলচা দিয়ে সেগুলি তুলতে হয়েছে। ওই বাড়িতে অবশ্য এখনও রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি কুকুর-বিড়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy