Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

‘আমার ভয় করছে’, হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও ভরসা পাচ্ছেন না মা

এর মধ্যেই বাড়ি ফিরতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বন্দনাদেবী। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি ছেলেকে নির্দেশ দেন, একদিনের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে বন্দনাদেবীকে বাড়ি ফেরাতে হবে।

প্রাপ্তি: হাতের আঘাত দেখাচ্ছেন বন্দনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

প্রাপ্তি: হাতের আঘাত দেখাচ্ছেন বন্দনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও বাড়ি ফিরতে ভরসা পাচ্ছেন না বন্দনা শিট। ডোমজুড়ের দক্ষিণপল্লিতে দু’কাঠা জমির উপরে একতলা পাকা বাড়ি বন্দনাদেবীর। সেই বাড়ি থেকে মাস খানেক আগে তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বড় ছেলে মনোজ, মেজ ছেলে পঙ্কজ ও তাঁর স্ত্রী পুতুল। বন্দনাদেবীর অভিযোগ, দু’কাঠা জমির উপরে প্রোমোটারি করার মতলব ছিল মনোজের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শরৎপল্লির বাসিন্দা তারক দাস। কিন্তু জমিটি প্রোমোটারের নামে লিখে দিতে রাজি হননি বন্দনাদেবী। সে কারণে একাধিক বার তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গত ১১ জুন রাতে মনোজ, তারক, পঙ্কজ এবং পুতুল মিলে ফের মারধর করার পর ছোট ছেলে স্বপনকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন বন্দনাদেবী। কয়েকদিন ‌এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন তিনি। পরে পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন।

এর মধ্যেই বাড়ি ফিরতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বন্দনাদেবী। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি ছেলেকে নির্দেশ দেন, একদিনের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে বন্দনাদেবীকে বাড়ি ফেরাতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন বন্দনাদেবী বলেন, ‘‘আদালত বড় ছেলে মনোজকে আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বটে। কিন্তু আমার খুব ভয় করছে।’’

বন্দনাদেবীর কথায়, ‘‘প্রথম বার মারধর করার পর আমরা ডোমজুড় থানায় যাই। পুলিশ এসে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে যায়। শেষবার মারধর করা হয় ১১ জুন রাতে। ছোট ছেলে পুলিশ ডেকেছিল। কিন্তু পুলিশের সামনেই আমাদের দু’জনকে বেধড়ক মারধর করে। তারপরে কোন ভরসায় বাড়ি ফিরব।’’

বন্দনাদেবীর চার ছেলে। সেজ ছেলে শ্যামবাজারে থাকেন। দক্ষিণপল্লিতে দু’কামরার বাড়িতে তিন ছেলেকে নিয়ে থাকতেন তিনি। তিনজনের মধ্যে একমাত্র পঙ্কজ বিয়ে করেছেন। তিনি হাওড়ার একটি ঢালাই কারখানায় কাজ করেন। বড় ছেলে মনোজ তেমন কিছু কাজ করেন না। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় নানারকম অসামাজিক কাজের অভিযোগ আছে বলে জানান ছোট ছেলে স্বপন।

তিনি বলেন, ‘‘বড়দা একজন প্রতারক। এলাকার বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মাকে ভুল বুঝিয়ে ব্যাঙ্কে জমি বন্ধক রেখে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। একটি পয়সাও শোধ করেননি। ব্যাঙ্ক থেকে রোজ মায়ের নামে চিঠি আসছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের পেনশন দাদাই সই জাল করে তুলে নিতেন। এবার প্রোমোটারের হাতে একমাত্র ভিটেটুকু তুলে দিতে চাইছেন। তারক দাস নামে এক দালাল, আমার মেজদা আর বৌদিও সঙ্গে রয়েছেন।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে মনোজ আর এলাকায় আসেন না। তাঁকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে তারকবাবু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওই জমির কোনও সম্পর্ক নেই। আমি একসময় চিটফান্ডের এজেন্ট ছিলাম। এখন গ্যারাজ করে কোনওমতে সংসার চালাই। ভাল করে খেতেই পাই না। প্রোমোটারি করব?’’ তাঁর অভিযোগ, বন্দনাদেবীর ছোট ছেলে তৃণমূল করেন। নানারকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তারকবাবু বলেন, ‘‘আমি দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় স্বপন তাঁদের পারিবারিক ঝামেলায় আমাকে জড়িয়ে দিয়েছেন।’’

বিচারাধীন বিষয় হওয়ায়, হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের তরফে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

High court Domjur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy