জল-যোগ: পড়ে থাকা টায়ারের মধ্যে জমেছে জল। উত্তর হাওড়ার কালী মজুমদার লেনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
প্রায় ১৫টি মাস কেটে গিয়েছে। মেয়র, ডেপুটি মেয়র কিংবা কাউন্সিলরের মতো পদগুলির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই হাওড়া পুরসভার। বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পরে রাজ্য সরকার সরাসরি কমিশনারের নেতৃত্বে গত একটি বছর পুরসভা চালিয়েছে ঠিকই। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে বহু প্রশ্ন এবং অভিযোগ উঠেছে গত একটি বছর ধরেই। ক্ষুব্ধ নাগরিকদের বড় অংশেরই অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ গত এক বছরে ঠিক মতো হয়নি। যার জেরে ডেঙ্গির প্রকোপ ওই ভাবে ছড়িয়েছিল। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বোর্ড চালানোর সময়ে কিন্তু তা ঘটেনি।
পুরসভার হিসেবে ২০১৯-এ হাওড়া পুর এলাকাতেই প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল চার জনের। বিরোধীরা অবশ্য দাবি করেছিলেন যে, শেষ পাঁচ বছর নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার এবং জঞ্জাল অপসারণে ব্যর্থ তৃণমূলের বোর্ডই ডেঙ্গি মোকাবিলার উপযুক্ত পরিকাঠামো হাওড়ায় গড়ে তুলতে পারেনি।
রাজনীতির এই চাপান-উতোরের কথা বাদ রেখেও হাওড়াবাসীদের একটি বড় অংশেরই অভিযোগ, শেষ এক বছরে ডেঙ্গি সেখানে ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। বর্তমান পুর আধিকারিকেরা দাবি করেছেন, তাঁরা চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় তৎপর। কিন্তু বাসিন্দারা সেই দাবিতে ভরসা রাখতে পারছেন না বলেই জানিয়েছেন।
প্রাক্তন এক পুর প্রতিনিধি জানান, হাওড়া শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত প্রথম হয় ২০১৫ সালে। তার পরে প্রতি বছরই হাওড়া শহরে বিক্ষিপ্ত ভাবে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, আগের বোর্ডের আমলে ২০১৮ সালে ডেঙ্গির মরসুমে ৮০০ জন আক্রান্ত হন। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা এক লাফে প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়।
গত চার বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাওড়ার ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি ছিল। সমস্যার মোকাবিলায় বছর চারেক আগেই পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে তৈরি করা হয় র্যাপিড অ্যাকশন টিম ও ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট। ওই দলে দু’হাজার অস্থায়ী মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীও ছিলেন। হাওড়ার সঙ্গে বালি পুরসভা যোগ হওয়ায় মোট ৬৬টি ওয়ার্ডের জন্য নেওয়া হয় ২৮৩ জন সুপারভাইজার ও তিন জন চিকিৎসককে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৈরি হয় ১৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
ডেঙ্গি নিয়ে ব্যর্থতার পিছনে এক প্রাক্তন পুর কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘সব ব্যবস্থা থাকলেও পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে এখনও পর্যন্ত এক জনও স্বাস্থ্য অফিসার নেই। পতঙ্গবিদ-সহ পতঙ্গবাহিত রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। যার ফলে সব থেকেও স্বাস্থ্য দফতর কার্যত অভিভাবকহীন।’’
যদিও পুর আধিকারিকদের দাবি, এ বছর স্বাস্থ্যকর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন। মশার ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ প্রায় সাড়ে তিন হাজার জায়গা চিহ্নিত করা গিয়েছে। পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল টিম ওই জায়গাগুলিতে নিয়মিত লার্ভিসাইড তেল স্প্রে করছে। পুরসভার দাবি, এখন থেকে মশার ডিম ধ্বংস করতে পারলে বর্ষার সময়ে মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না। ওই কাজে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত একটি দলও তৈরি করা হচ্ছে। ওই দলের সঙ্গে ভেক্টর কন্ট্রোলের জন্য ৩৫০ জনের আর একটি দলকেও তৈরি রাখা হচ্ছে।
পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ জানান, এলাকায় মশার ডিম পাড়ার জায়গা চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন পুকুরও চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বার পুকুরগুলির উপরে বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। কারণ অনেক পুকুরেও মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। যদিও হাওড়াবাসীর মতে, কাজের মাহাত্ম্য বোঝা যাবে ডেঙ্গির মরসুম এলে। তার আগে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy