Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Coaching center

শিক্ষার জন্য জমি দান দিনমজুরের

বেচুরামের সামান্য কিছু জমি আছে।নিজের জমি থেকে দু’শতক তিনি ওই সংগঠনকে দান করতে দু’বার ভাবেননি।

 লেখাপড়া: বেচুরাম হাজরার জমিতে তৈরি কোচিং সেন্টার। —নিজস্ব চিত্র

লেখাপড়া: বেচুরাম হাজরার জমিতে তৈরি কোচিং সেন্টার। —নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০৭
Share: Save:

সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ঘরের টিনের ছাউনি আর মাটির দেওয়ালে অসংখ্য ছিদ্র। সংসারের সর্বত্র ছড়িয়ে দারিদ্রের চিহ্ন। এমনই এক পরিবারের কর্তা নিজের গ্রামের কচিকাঁচাদের শিক্ষার জন্য দান করলেন দু’শতক জমি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সওয়া দুই লক্ষ টাকা। ওই জমিতে গড়ে উঠছে কোচিং সেন্টার। সেখানে পড়াশোনা করবে গ্রামের অভাবী পড়ুয়ারা।

বছর তেষট্টির বেচুরাম হাজরা নামে ওই খেতমজুরের বাড়ি উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতের ঢাকিপাড়ায়। গ্রামে একটি হাইস্কুল এবং একটি প্রাথমিক স্কুল আছে। বছর খানেক আগে উলুবেড়িয়ার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই পাড়ার পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পড়ানোর কাজ শুরু করে। তার সঙ্গে আঁকা ও আবৃত্তি প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু হয়। পড়ানোর কোনও স্থায়ী ঘর ছিল না। ফলে, সমস্যায় পড়েন পড়ুয়া এবং পাঁচ শিক্ষিকা। কখনও কারও দালানে, কখনও আবার এলাকার জরি কারখানায় বসছিল কোচিং সেন্টার। বৃষ্টির সময় খুবই সমস্যা হত পড়াশোনার। করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যা আরও বাড়ে। কেউ-ই তাঁর বাড়ি বা দালানে ক্লাস করার অনুমতি দেননি। এই সঙ্কটেই এগিয়ে আসেন বেচুরাম। বেচুরামের সামান্য কিছু জমি আছে। ছেলেরা কেউ ভাল চাকরি করেন না। পরিবারের এক মহিলা পরিচারিকার কাজ করেন। তাতে কী! নিজের জমি থেকে দু’শতক তিনি ওই সংগঠনকে দান করতে দু’বার ভাবেননি। সেই জমিতে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। বেচুরাম বলেন, ‘‘অভাবের জন্য অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। একটি সংগঠন বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের কোচিং দিচ্ছে। তারা পড়াশোনা শিখে বড় হয়ে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে। এ কথা ভেবেই কোচিং সেন্টারের জন্য নিজের জমির খানিকটা দিলাম।’’

প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল নামে গ্রামের এক মহিলা বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে গ্রামের পুরুষেরা কাজ হারিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখতে পারছেন না। একটি সংস্থা বিনা পয়সায় কোচিং করাচ্ছে। এতে আমরা উপকৃত হচ্ছি। ঘর না-থাকায় কোচিং করাতে অসুবিধা হচ্ছিল। বেচুরামবাবু সেই সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছেন।’’

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক মানস দাস বলেন, ‘‘ঢাকিপাড়ার বাসিন্দারা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে। ঘরের অভাবে গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য কোচিং সেন্টার চালাতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। বেচুরামবাবু জমি দান করে সেই সমস্যার সমাধান করেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Daily wage worker Uluberia Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy