বিপর্যস্ত: ধান গাছ গোছা করে ডগা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নালা কেটে জল বেরনোর পথও করা হয়েছে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
পাকা ধান কাটতে আর কিছু দিন বাকি ছিল। কিন্তু বাদ সাধল বৃষ্টি।
রাজ্যের অন্যতম ধান উৎপাদক জেলা হুগলির বহু খেতেরই ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তা বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা। পাঁচ-ছ’টা ধান গাছের গোছ একসঙ্গে করে ডগা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। যাতে ঝড় বা ভারী বৃষ্টিতে আর তা লুটিয়ে না-পড়ে। কেউ আবার জমির মাঝ বরাবর নালা করে জমা জল বের করার পথ করছেন। মাথায় হাত চাষিদেরও।
গোঘাটের শান্তিপুরের চাষি অচিন্ত্য দে ২০ বিঘা জমিতে আমনের আম্রপালি প্রজাতির ধান চাষ করেছেন। তাঁর হাহাকার, “ধান কাটার মুখে বুলবুল বিপর্যয়ে আমরা শেষ হয়ে গেলাম। দিন সাতেক পরেই ধান কাটব ঠিক করেছিলাম। এখন যতটা পারছি ধানের শিস রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছি। একসঙ্গে অনেকগুলো ধানের গোছ অনেকটাই ঝড় সামলাতে পারবে। খড় নষ্ট হয়ে গেলেও পরে ধানের শিস কেটে নিতে পারব।”
এ ভাবেই লুটিয়ে পড়া ধানের গোছ একসঙ্গে বেঁধে শিস রক্ষা করার জন্য চাষিদের চেষ্টা দেখা গিয়েছে আরামবাগ, পুরশুড়া, খানাকুলেও। আরামবাগের সালেপুরের চাষি রঘুপতি বাড়ুই বলেন, “ছোট ধান গাছের প্রজাতি আম্রপালি বা স্বর্ণমাসুরি লুটিয়ে পড়ল। এগুলির যদিও কিছু উদ্ধার হয়, লম্বা গাছের খাস এবং ডহর প্রজাতির ধানের অস্তিত্বই থাকবে না। ওগুলো কাটতে এখনও সপ্তাহ দুই বাকি রয়েছে।’’ পুরশুড়ার চিলাডাঙির শঙ্কর হাটি নামে এক চাষির খেদ, “ইতিমধ্যে পালং, পুনকো, মুলো সবেরই গোড়া পচে নষ্ট হতে বসেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপিও শেষ। ধান তুলে সেই জমিতে আলু চাষ হয়। তাও অনেক দেরি হয়ে যাবে।’’
সারা জেলাতেই ধান চাষ এবং আনাজ চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। জেলা কৃষি আধিকারিক শনিবার বিকেলে অশোক তরফদার বলেন, “এখনই বেশ কিছু ধানগাছ পড়ে গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, ঝড়বৃষ্টি বাড়বে। আমরা রবিবারে পুরো ক্ষয়ক্ষতির
চিত্র পাব।”
এ বারে বৃষ্টি কম হওয়ায় হাওড়া জেলায় আমন ধানের চারা রোপণে সমস্যায় পড়েছিলেন চাষিরা। শেষ পর্যন্ত দেরিতে হলেও বৃষ্টি নামে। ফলে, চাষিদের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি চাষিদের হাসি কেড়ে নিয়েছে। হাওড়াতে এ বার প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। তার অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা কৃষি দফতরেরও। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘ফলন্ত ধান নষ্ট হয়ে যাওয়াটা খুব মর্মান্তিক।’’
আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরেই বেশি আনাজ চাষ হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ জমিতেই গাছের গোড়ায় জল জমে গিয়েছে। যা ক্ষতিকর। মাথায় হাত পড়েছে ফুলচাষিদেরও। সামনে বিয়ের মরসুম। তার আগে বৃষ্টির জমা জলে গোড়া পচে ফুলগাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন চাষিরা।
জেলায় ফুল চাষ হয় মূলত বাগনান-২ নম্বর ব্লকের বাঁকুড়দহ, কাঁটাপুকুর, হেলেদ্বীপ, বৈদ্যনাথপুর প্রভৃতি এলাকায়। সর্বত্রই চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। জারবেড়া, দোপাটি, গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, চেরি, রজনীগন্ধা— সব ফুলের একই অবস্থা। বাঁকুড়দহ গ্রামের ফুলচাষি পুলক ধাড়া বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগেই অতিবৃষ্টি হল। তারপরে এই অবস্থা। ক্ষতি কী করে সামাল দেব বুঝতে পারছি না।’’ ‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘শুধু হাওড়ায় নয়, বুলবুলের প্রভাবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও ফুল চাষের বেশ অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে।’’ রাজ্য সরকারের কাছে তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy