নিজের ভাঙা ঘরের সামনে আজিজুদ্দিন। —নিজস্ব চিত্র
বাড়ি গিয়েছে। জীবিকাও।
এই মধ্য চল্লিশে আচমকা জোড়া আঘাতে দিশাহারা আজিজুদ্দিন মল্লিক।
তিনি আয়লা দেখেছেন। বুলবুল দেখেছেন। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও বাবার আমলে তৈরি মাটির দোতলা বাড়িটা সেই সব ঝড়ে তবু টিকে ছিল। কিন্তু আমপান যে এ বার বাড়িটাকে ধূলিসাৎ করে দেবে, ভাবতে পারেননি আমতা-২ ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের চিৎনান মিদ্যাপাড়ার বাসিন্দা আজিজুদ্দিন। উড়ে গিয়েছে বাড়ির টালির চালও। অন্যের পুকুর জমা নিয়ে মাছ চাষ করতেন। ঝড়ে পুকুরে গাছ পড়ে বহু মাছ মরেছে।
আজিজুদ্দিনের খেদ, ‘‘মরা মাছগুলি যে তুলে নেব, উপায় নেই। গাছ পড়ে আছে। পুকুরে নামব কী ভাবে? অনেক টাকা দিয়ে পুকুর জমা নিয়েছিলাম। মাছ বড় হয়ে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। জীবিকা গেল, বাড়িও। বুধবার রাতে চোখের সামনে বাড়িটা ধসে পড়ে গেল। ঝরা পাতার মতো উড়ে গেল টালি। কী করে বাঁচব বুঝতে পারছি না।’’
বুধবার থেকে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পড়শির পাকা বাড়িতে উঠেছে আজিজুদ্দিন। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন, বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। হাওড়ার ‘দ্বীপ’ এলাকা বলে পরিচিত ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং পাশের ভাটোরা পঞ্চায়েত। দু’টি পঞ্চায়েত রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ঘেরা। দু’টি নদীর মাঝখানে পড়ে আমপানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে দুই পঞ্চায়েত। এলাকাটি মূলত কৃষিপ্রধান। স্থলভাগের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না-থাকায় ইমারতি দ্রব্য বহন করে আনা
খরচ সাপেক্ষ। ফলে, গরিব মানুষরা পাকা বাড়ি করতে পারেন না। একতলা-দোতলা মাটির বাড়িতে বাস করেন। ঝড়ের তাণ্ডবে মাটির বাড়িগুলি কার্যত ধূলিসাৎ হয়েছে। অনেককেই আশ্রয় নিতে হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। গ্রামবাসীরা কৃষিকাজের সঙ্গে মাছ চাষও করেন। ঝড়ে বোরো ধান, আনাজ, বাদাম, তিল চাষ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
আজিজুদ্দিন বলেন, ‘‘মাছ চাষ এবং সময় পেলে একশো দিনের কাজ করেও সংসার চালাতে হিমসিম খাই। পাকা বাড়ি করার খরচ অনেক। কোথায় পাব? ভেবেছিলাম ঝড় কেটে গেলে মাটির বাড়িতে ফিরে যাব। এখন কোথায় বাস করব আমি?’’ একই প্রশ্ন এখন শোনা যাচ্ছে গোটা ‘দ্বীপাঞ্চলে’। এই এলাকা থেকে নির্বাচিত আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা কর্মাধ্যক্ষ মানিক দেলওয়ার মিদ্দে বলেন, ‘‘ঝড়ে
পুরো দ্বীপ এলাকা জুড়ে গরিব মানুষগুলির সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। কী করে এই ক্ষতিপূরণ হবে বুঝতে পারছি না।’’ এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ এখানকার গরিব মানুষগুলি বড় বেশি রকমের অসহায়। তাঁদের বাসস্থান এবং জীবিকার ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সরকারকে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে।’’ আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে। এই এলাকার মানুষের সমস্যার কথা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব।’’
কত দ্রুত তাঁরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পান, এখন সেটাই প্রশ্ন দুর্গতদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy