প্রতীকী ছবি
আমপানে বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বাড়ির মালিক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। সরকারি তরফে আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা তো তাই বলে ছেড়ে দেওয়া যায় না! তাই ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম উঠেছে এমনই একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের। অথচ যে মানুষগুলো আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাঁদের থাকার জায়গাটুকুও নেই, তাঁদের অনেকের নাম নেই ক্ষতিপূরণের তালিকায়। এমনই অভিযোগের তির তৃণমূল পরিচালিত সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েত সমিতির অধীন তৃণমূল শাসিত ঝোড়হাট পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলা সদর তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী অরূপ রায়কেও। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগটি গুরুতর। জেলাশাসককে অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে বলেছি। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে টাকা বিলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’’
এমন দুর্নীতি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষের সাফাই, ‘‘প্রধানেরা যে তালিকা দিয়েছিলেন তার ভিত্তিতেই প্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। এতে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও হাত নেই।’’ আর বিডিও সন্দীপ মিশ্র ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তরও দেননি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া বাড়ির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথমে দেওয়া হবে কুড়ি হাজার করে টাকা। তাছাড়াও ১০০ দিনের প্রকল্পের তাঁদের নাম নথিভূক্ত করে আরও ২৮ হাজার টাকা দেওয়া হবে মেরামতির মজুরি হিসাবে। ঝোড়হাট পঞ্চায়েতেও ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়। কিন্তু এই তালিকা ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে প্রকাশিত হওয়ার পরেই জলঘোলা শুরু হয়।
দেখা যায় এই তালিকায় এমন নামও আছে যাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। শুধু তাই নয়, এই এলাকা থেকে নির্বাচিত বেশ কয়েকজন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের নাম এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও তালিকায় স্থান পেয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির যে সব সদস্যের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে তাঁদের বাড়ির যে কোনও ক্ষতি হয়নি তা তাঁরা নিজেরাই জানিয়েছেন। অসীমা সাধুখাঁ নামে এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘‘চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় আমারও নাম আছে। আমার বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। তা সত্ত্বেও তালিকায় নাম দেখে খুব অপমানিত বোধ করি। কেন এমন হল তা জানতে চেয়ে বিডিওকে চিঠি দিয়েছি। বিষয়টি জেলাশাসককেও জানিয়েছি।’’
অচিন্ত্য দাস নামে তৃণমূলেরই আরও এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বলেন, ‘‘আমাদের দলের একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় আছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুধু পঞ্চায়েত সমিতির কয়েকজন সদস্য নন, এমন বহু সাধারণ মানুষের নাম তালিকায় আছে যাঁদের নতুন পাকা বাড়ি। কোনও ক্ষতি হয়নি। আমি স্থানীয় সংসদ এবং জেলাশাসকের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করব।’’
বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করা এক প্রৌঢ়ার ক্ষোভ, ‘‘লকডাউনে কাজ ছিল না। হাতে টাকা নেই। এ দিকে ঝড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও চলে গিয়েছে। ঘরের টালি সারারনোরও টাকা নেই। অথচ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় আমার নামই নেই। এটা অন্যায় নয়!’’
যে পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা, সেই এলাকার প্রধান রূপম সাধুখাঁর অভিযোগ, ঝড়ের পরেই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করে একটি তালিকা বিডিও-র কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। রূপমবাবু বলেন, ‘‘আমরা মোট ১১৪ জনের তালিকা করেছিলাম। তাঁদের বাড়ি পুরোপুরি ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা পুরোপুরি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু পরে চূড়ান্ত তালিকায় দেখলাম আমাদের তালিকা থেকে অনেক নাম বাদ গিয়েছে। তার জায়গায় আরও কিছু নাম উঠেছে যাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। আমরা দলীয় নেতৃত্ব ছাড়াও প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। এই তালিকায় স্বজনপোষণের চিহ্ন প্রকট। ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির যোগসাজসে এটা করা হয়েছে।’’
এই পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের তৃণমূল মনোনীত কো-মেন্টর অরূপেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুধু ঝোড়হাট নয়, সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতি ক্ষতিগ্রস্তদের যে তালিকা করেছে তাতে দূর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার জন্য যে আম্তরিক চেষ্টা করছে সাঁকরাইলে তার ঠিক বিপরীত কাজ করা হচ্ছে। এত বড় দুর্নীতি রাজ্যের কোথাও হয়নি বলে আমাদের ধারণা।’’ তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy