স্তব্ধ: কারখানা রয়েছে। নেই কাজ। —নিজস্ব িচত্র
তিন বছর আগেও মাসে ৫০ হাজার টাকা রোজগার করতেন দুধকুমার পুরকায়স্থ। এখন ১০ হাজার টাকা রোজগার করতেও হিমসিম খান।
একসময়ে দুধকুমারের কারখানায় অন্তত ৫০ জন স্থায়ী কারিগর ছিলেন। এখন কেউ নেই। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে নিজেই যতটুকু পারেন কাজ করেন। বাড়তি কাজ থাকলে চুক্তিতে কারিগর নেন।
ডোমজুড়ের জয়চণ্ডীতলার বাসিন্দা দুধকুমার ঝুটো গয়না কারখানার মালিক। তাঁর মতো একই হাল ডোমজুড়, মাকড়দহ, কাটলিয়া, বেগড়ি, নিবড়া প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ওই রকম বহু গয়না কারখানার মালিকদের। মন্দার মেঘ ঢেকে ফেলেছে ডোমজুড়ের এই নিজস্ব শিল্পকে। পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে অনেকে যোগ দিচ্ছেন ১০০ দিনের কাজে। মুম্বই রোডের ধারে গড়ে ওঠা অন্য কারখানাগুলিতেও অল্প মজুরিতে নাম লিখিয়েছেন অনেকে।
সঙ্কট কোথায়
• নোটবন্দির পর থেকে চাহিদা কম। তারপরে জিএসটি-র ধাক্কা।
• জিএসটি দিয়ে অ্যালুমিনিয়াম কিনলেও গয়না বিক্রির সময় সেই দাম মিলছে না।
• এই শিল্পে এক সময়ে যুক্ত ছিলেন ডোমজুড়ের পাঁচ হাজার পরিবার। এখন দু’হাজার।
• কারিগররা আগে মাসে ১০ হাজার টাকা রোজগার করতেন। এখন ৬০০০
টাকাও হয় না।
• রোজগার কমছে
কারখানা-মালিকদেরও।
দুল, চুড়ি-সহ নানা ঝুটো গয়না এ তল্লাটে তৈরি হয় প্রায় ৫০ বছর ধরে। সেই গয়না চলে যায় ক্যানিং স্ট্রিট, বাগড়ি মার্কেটে। সেখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই সব পণ্য কিনে নেন। কিন্তু ব্যবসার সেই রমরমা দিনের পর দিন কমছে। ডোমজডু এবং আশপাশের এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে দু’হাজারে। তা-ও যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের রোজগার কমছে।
কেন?
শিল্পের সঙ্গে জড়িতেরা এই বেহাল অবস্থার জন্য নোটবন্দি ও জিএসটিকে দায়ী করেন। তাঁদের মতে, রাজ্য সরকার ভ্যাট বসানোয় ২০১১ সালেও একবার এই শিল্পে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কারিগর ও কারখানা-মালিকদের আবেদনে রাজ্য সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করে। ফলে, ফের মাথা তুলে দাঁড়ায় এই শিল্প। কিন্তু সকলের হাসি উধাও হয়ে যায় ২০১৬ সালে নোটবন্দির কথা ঘোষণার পর থেকে। বাজারে নগদের জোগানের অভাবে চাহিদা কমতে শুরু করে। কফিনে শেষ পেরেকটি পড়ে জিএসটি চালুর পরে। তার মধ্যেও গতবার পুজোর আগে কিছু গয়না বিক্রি হয়েছিল। এ বার মন্দা পরিস্থিতিতে অবস্থা শোচনীয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
কারখানা-মালিকরা জানান, ঝুটো গয়না তৈরির প্রধান উপকরণ অ্যালুমিনিয়াম কেনার সময়ে জিএসটি দিতে হচ্ছে। ফলে, বাড়তি দাম পড়ছে। কিন্তু সেই গয়না বিক্রির সময় পাইকারি ব্যবসায়ীরা জিএসটি ধরছেন না। দুধকুমারবাবু বলেন, ‘‘অধিকাংশ পাইকারি ব্যবসায়ী জিএসটি ধরে বাড়তি দাম দিতে রাজি হন না। ফলে, আমাদের বাড়তি দাম না-পেয়েই পণ্য বেচতে হচ্ছে। লাভ কমছে। লোকসানও হচ্ছে। এ বারে যা অবস্থা, তা বলার মতো নয়।’’
একই কথা জানান সমীর ধাড়া নামে এক কারখানা-মালিক। তিনি বলেন, ‘‘এই গয়নার চাহিদা মানুষের শখের উপরে নির্ভর করে। কিন্তু নোটবন্দির পর থেকে মানুষের হাতে নগদের জোগান কমায় তাঁরা
শখের জিনিস কেনা থেকে
নিজেদের ক্রমশ সরিয়ে নিচ্ছেন। জিএসটি-ও এই শিল্পে ঠিক ভাবে চালু করা হল না। আমরা শেষ হয়ে গেলাম।’’ ডোমজুড়ে সমীরবাবুর কারখানায় তিন বছর আগেও ২৫ জন স্থায়ী কারিগর ছিলেন। এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১০-এ।
স্থায়ী কারিগরের বদলে চুক্তিভিত্তিক কারিগরের উপরে নির্ভরতা বেড়েছে এই এলাকার বেশিরভাগ কারখানায়। দুধকুমারবাবু বলেন, ‘‘আমার কারখানায় যখন ৫০ জন কারিগর ছিলেন, দিনরাত কাজ হত। ভালমন্দ খাওয়া-দাওয়া হত। কী সব দিন ছিল! এখন সব খাঁ খাঁ করছে। মাত্র তিন বছরে সব শেষ হয়ে গেল। এই শিল্প টিকবে কিনা সন্দেহ!’’
একই খেদ কারিগরদেরও। জয়চণ্ডীতলার পাড়ুইপাড়ার মৃত্যুঞ্জয় পাড়ুই বিভিন্ন কারখানা থেকে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে একটা কারখানার কাজ করেই সামলাতে পারতাম না। মাসে কম করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেছি। এখন একাধিক কারখানা থেকে কাজ ধরতে হয়। তাতেও মাসে ৬০০০ টাকা হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy