পাশে: মাঠে খুদেদের সঙ্গে পুলিশ কমিশনার। ছবি: তাপস ঘোষ
ধরপাকড় চলছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল অস্ত্র। তাতেও দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য নিয়ে ভয় কাটেনি চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দাদের। সেই ভয় কাটাতেই বুধবার মাঠে নামল পুলিশ। ছোটদের খেলার অনুষ্ঠানে এসে তারা জানিয়ে গেল, এই এলাকা আর দুষ্কৃতীদের অঙ্গুলিহেলনে চলবে না।
এ দিন রবীন্দ্রনগর মাঠে স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার (সিপি) হুমায়ুন কবীর সেখানে যান। সঙ্গে ছিলেন ডিসি (চন্দননগর) কে কান্নান এবং চুঁচুড়া থানার ওসি প্রদীপ দাঁ। সিপি প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। স্থানীয়দের সাহস জোগান। মাইক হাতে সিপি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা গুজব ছড়াতে পারে। কান দেবেন না। দুষ্কৃতীরা এখানে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছিল। আজ এখানে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি, ওদের ভাল মতো শায়েস্তা করব। জেল থেকে বেরিয়ে দুষ্কৃতীরা কিছু করতে পারে, এই ভয় পাবেন না কেউ।’’
জিটি রোড ধরে খাদিনা মোড় পেরিয়ে ব্যান্ডেলের দিকে কিছুটা এগোতেই বা’দিকে রবীন্দ্রনগর বাজার। এই এলাকাই হয়ে উঠেছিল দুষ্কৃতী টোটন বিশ্বাস ও তার দলবলের ‘মুক্তাঞ্চল’। তার নামে এলাকা থরহরিকম্প। গোলা-বারুদের ভাণ্ডার হয়ে গিয়েছিল রবীন্দ্রনগর। অভিযোগ, শাসকদলের কিছু নেতা এবং পুলিশের একাংশের মদতেই টোটনদের এই বাড়বাড়ন্ত। গত ১৩ জুলাই রাতে টোটনের ‘ডান হাত’ প্রসেনজিৎ সাহা ওরফে চিকনা এবং তার স্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে এখানে কার্যত মোচ্ছব চলছিল। ওই রাতে পুলিশ হানা দেয়। অভিযোগ, তখন টোটন-বাহিনী পুলিশকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ তাদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি। তবে এর পর থেকেই টোটনের সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে পুলিশ উঠে-পড়ে লাগে। টোটন-সহ ধরা পড়ে ২৬ জন দুষ্কৃতী।
এত কিছুর পরেও মানুষের ভরসা কতটা ফিরবে, সেই প্রশ্ন ছিলই। বিষয়টি পুলিশকর্তাদেরও অজানা নয়। দুষ্কৃতী দমন অভিযান-পর্বে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের শীর্ষ আধিকারিকরা বারে বারেই জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনগরকে পুরোপুরি ছন্দে ফেরাতে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা এবং তাঁদের ভরসা জোগানো জরুরি। সেই জন্য এখানে সামাজিক অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হয়।
বুধবার সেই কাজই শুরু হল। এরপরে ওই মাঠে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুলিশের বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিকেট খেলা হবে বলে জানান সিপি। এ জন্য পঞ্চায়েতের লোকজনকে মাঠটি ভাল ভাবে তৈরির এবং পাশে পড়ে থাকা ইমারতি দ্রব্য সাত দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশও দেন ওই পুলিশকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘ওই রাতে (১৩ জুলাই) দুষ্কৃতীরা পুলিশের উপরে গুলি চালায়। সে দিনই এখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, ওদের উচিত শিক্ষা দেব। মনে হয়, গত চার মাসে সেটা করতে পেরেছি। আরও অনেক কিছু বাকি আছে। দেখতে থাকুন।’’
পুলিশকর্তাদের আশ্বাস, আরও অস্ত্র দুষ্কৃতীদের ডেরায় থাকলে তা উদ্ধার করা হবে। যারা পলাতক, তাদের সবাইকেই গ্রেফতার করা হবে। সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে সিপি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা যাতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেই দায়িত্ব আপনাদেরও। দুষ্কৃতীরাজ পুরোপুরি ধ্বংস করতে আপনাদের সহযোগিতা দরকার। ওদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে আপনাদের।’’
মাঠে না-এলেও রবীন্দ্রনগরের অনেক সাধারণ মানুষ দূর থেকে মাইকে পুলিশের কথা শুনেছেন। এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনগর যেন হুগলির চম্বল। দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত ভাল লাগে না। জঙ্গলের রাজত্ব বন্ধ করতে এই অভিযান যেন না থামে।’’ এক ব্যবসায়ীর প্রশ্ন, ‘‘পুলিশের এই দৌড়ঝাঁপ ভবিষ্যতেও থাকবে তো?’’
মাঠে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের কথার বিচ্যুতি হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy