অস্থায়ী: বিহার থেকে খেতমজুরের কাজে আসা ১২১ জনের সংসার এখন খামারগাছি স্টেশনেই। নিজস্ব চিত্র
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মই এখন ওঁদের অস্থায়ী ‘সংসার’!
স্টেশনে দাঁড়িয়ে এক্সপ্রেস ট্রেন। কিছু শিশু সেখানে দৌড়াদৌড়ি করছে। প্ল্যাটফর্মে গাছের নীচে উনুনে ভাত ফুটছে। আশপাশে এক দঙ্গল মানুষ।
লকডাউনের পর থেকে এ ভাবেই হুগলির খামারগাছি স্টেশনে দিন কাটছে বিহার থেকে খেতমজুরের কাজে আসা ১২১ জনের (মহিলা ও শিশু মিলিয়ে)। খাবার থেকে ভাইরাস মোকাবিলার সুরক্ষা সামগ্রী— কিছুই পর্যাপ্ত মিলছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।
কিন্তু যে ভাবে ওই শ্রমিকেরা থাকছেন, তা নিয়ে আশঙ্কিত এলাকার মানুষজন। তাঁরা জানান, ওই শ্রমিকেরা শারীরিক দূরত্ব মানছেন না। এক জায়গাতেই জড়ো হয়ে থাকছেন। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তাঁদের বলা হয়েছে, ট্রেনের মধ্যে থাকতে। কিন্তু তাঁরা স্টেশন চত্বরে থাকছেন। রাতে অনেকে স্টেশনে শুচ্ছেন। কেউ কেউ আবার স্থানীয় মাঠঘাটে রাত কাটাচ্ছেন।
বিডিও (বলাগড়) সমিত সরকার জানান, সবাই যাতে এক সঙ্গে না থাকেন, ওই দলে থাকা লোকজনকে সে কথা বার বার বোঝানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে ৬১টি পরিবারের ১২১ জন রয়েছেন। ব্লক অফিস ছাড়াও পঞ্চায়েত বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ওঁদের শুকনো খাবার, চাল-সহ রান্নার জিনিস দেওয়া হচ্ছে। সাবানও দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার ওখানে স্বাস্থ্য শিবির করা হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর বিহারের নানা জায়গা থেকে বলাগড়ে পেঁয়াজ তুলতে আসে শ্রমিকের দল। এ বারেও বহু মানুষ এসেছিলেন সেই কাজে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই বাড়ি ফিরে গেলেও সবাই পারেননি। তাঁদেরই একটি বড় দলকে দিন কাটাতে হচ্ছে খামারগাছি স্টেশনে। ওই দলে থাকা বিহারি কুমার, চন্দন কুমারেরা জানান, দোলের সময় তাঁরা এখানে কাজে আসেন। লকডাউন ঘোষণা হতে বাড়ি ফেরার জন্য তাঁরা ওই স্টেশনে আসেন। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় ফিরতে পারেননি। অগত্যা সেখানেই থেকে গিয়েছেন।
চন্দনদের বক্তব্য, তাঁদের অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ট্রেনে আলো বা পাখা না-থাকায় কামরায় থাকা যাচ্ছে না। মশার উপদ্রবের মধ্যেই খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। প্রশাসন বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে কিছু চাল-আলু দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। শিশুদের দুধ অমিল। মহিলাদের স্যানিটারি ন্যাপকিনও মিলছে না। চন্দন বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। মানুষের পক্ষে এই ভাবে থাকা সম্ভব!’’
খামারগাছি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় আটকে পড়া ওই লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা খাবার পাচ্ছেন। তবে হাত ধোওয়ার সাবান বা স্যানিটাইজ়ার প্রয়োজন। চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা দরকার। বার বার বলা সত্ত্বেও ওঁরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। একজোট হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটা সমস্যার।’’ এলাকাবাসীর দাবি, এত জন এক সঙ্গে থাকায় স্টেশন চত্বরে জীবাণুনাশক ছড়ানো হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy