Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন, দূরত্ববিধি শিকেয়

শুধু জনাই নয়, হুগলি এবং হাওড়া জেলার প্রায় সর্বত্রই গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাই‌ন দেখা যাচ্ছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পের টাকা তুলতেই ভিড়।

লকডাউনে ব্যাঙ্কে ভিড়। উলুবেড়িয়ায়। —নিজস্ব চিত্র

লকডাউনে ব্যাঙ্কে ভিড়। উলুবেড়িয়ায়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৬
Share
Save

তখনও ব্যাঙ্ক খুলতে ঢের দেরি। জনাইয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে বেশ কিছু মানুষের ভিড়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই নেই। মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক খোলার পরেও কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই লাইন এবং পারস্পরিক ‘নৈকট্য’ কমল না। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কের সামনে এই বাড়তি ভিড় চিন্তায় ফেলছে প্রশাসনকে।

শুধু জনাই নয়, হুগলি এবং হাওড়া জেলার প্রায় সর্বত্রই গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাই‌ন দেখা যাচ্ছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পের টাকা তুলতেই ভিড়। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তিন মাস এই টাকা দেওয়ার কথা। এপ্রিল মাসের টাকা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।

হাওড়ার বাগনান, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, আমতা, ডোমজুড়, সাঁকরাইল সর্বত্রই ভোর থেকে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন পড়ছে। কোথাও দু’জনের মধ্যে তিন ফুটের দূরত্ব মানা হচ্ছে না। বহু মানুষ আসছেন মাস্ক ছাড়াই। ব্যাঙ্ক খুলছে সকাল ১০টায়। তার আগেই দীর্ঘ লাইন পড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের ভিতরে তিন থেকে পাঁচজনের বেশি কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে ঢুকতেই স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধুতে হচ্ছে গ্রাহকদের। কিন্তু বাইরে সে সবের বালাই নেই। মঙ্গলবার বাগনানের বাকসিহাটে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দেখা গেল, মেছোহাটের পরিস্থিতি। পুলিশ এসে মাঝে মাঝে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু পু‌লিশ চলে গেলেই পরিস্থিতি যে কে সেই।

অনেক জায়গায় ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা বেরিয়ে এসে সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বলে গ্রাহকদের দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়ানোর আবেদন করলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। শুধু টাকা তুলতেই যে গ্রাহকরা আসছেন তা নয়, অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে কি না, তা জানার জন্য বা পাশবই আপডেট করাতেও অনেকে লাইন দিচ্ছেন। উলুবেড়িয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জানান, নির্দিষ্ট নম্বরে মিসড্ কল দিয়ে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কি না, তা জানার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু গ্রাহকরা পাশবই আপডেট করিয়ে তবেই নিশ্চিত হতে চাইছেন। ফলে অযথা ভিড় বাড়ছে।

হাওড়া জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার প্রমোদ ঠাকুর বলেন, ‘‘কোন কোন ব্যাঙ্কের সামনে ভিড় হচ্ছে তার ছবি আনিয়ে জেলা প্রশাসনকে জানাচ্ছি। পুলিশ হস্তক্ষেপ করছে।’’ উপভোক্তাদের প্রতি তাঁর আবেদন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা এসে গিয়েছে। টাকা সুরক্ষিত থাকবে। যখন ইচ্ছা তাঁরা তা তু‌লতে পারেন। খুব প্রয়োজন না থাকলে সবাই যেন একসঙ্গে এসে ভিড় না করেন। কেননা, এতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ব্যাঙ্ককর্মী এবং গ্রাহক উভয়পক্ষেরই সংক্রমণের কবলে পড়ার আশঙ্কা।

হুগলির উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া থেকে পান্ডুয়া, ধনেখালি থেকে চণ্ডীতলা— সব জায়গাতেই সকাল থেকে ভিড় জমছে ব্যাঙ্কের সামনে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পান্ডুয়ার পোটবার একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কিয়স্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন নরেন বাউলদাস নামে এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘‘ভাবলাম, সকাল সকাল কাজ মিটিয়ে নেব। কিন্তু এসে দেখি বেজায় ভিড়। লকডাউনের জন্য কোনও কাজ না থাকায় আমিও দাঁড়িয়ে পড়লাম।’’

আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন ব্লক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পে ব্লকে গড়ে ৫০-৬০ হাজার উপভোক্তা আছে‌ন। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৮-১০টি। বহু মানুষ একসঙ্গে ভিড় করছেন। ব্যাঙ্কের ভিতরে অল্প কয়েক জন গ্রাহককে ঢুকতে দেওয়া হলেও বাইরে লাইন সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সেই জন্য গোঘাটের কামারপুকুর পঞ্চায়েতের মহেশপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বাইরে ত্রিপল টাঙিয়ে ছাউনি করেছেন। সেখানে গোটা চল্লিশ চেয়ার সাজানো হচ্ছে এক মিটার অন্তর। পানীয় জলের ব্যবস্থাও থাকছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে ‌না। অতিরিক্ত ভিড় লেগেই থাকছে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে দেখা গেল, বাইরে বেরিয়ে এসে লাইন ঠিক করার চেষ্টা করছেন। তিন জন পুলিশকর্মীও অনুরোধ করছেন, সবাই যেন নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ান। তাঁদের ধমকে খানিক কাজও হল। কিন্তু পরক্ষণেই দূরত্ব উধাও।

ব্যাঙ্ক-ম্যানেজার সৌরভকুমার দাস বলেন, ‘‘বারবার বাইরে গিয়ে গ্রাহকদের দূরত্ব বজায় রাখতে বলছি। অনেকেই তাতে খেপে গিয়ে বলছেন, তাঁরা নিজেরাই বিষয়টা বুঝে নেবেন। এক মিটার অন্তর সাজিয়ে রাখা চেয়ার গুছিয়ে নিয়ে একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করছেন।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}