Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

সাইকেলে মুম্বই থেকে বাড়ি ফিরলেন হরিপালের বরুণ

এক দশকেরও বেশি সময় আগে সংসারের তাগিদে বরুণবাবু মুম্বই পাড়ি দেন।

বরুণ মিত্র। —নিজস্ব িচত্র

বরুণ মিত্র। —নিজস্ব িচত্র

দীপঙ্কর দে
হরিপাল শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০১:১৭
Share: Save:

নবি মুম্বই থেকে হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়া। যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য দু’হাজার কিলোমিটার। সাইকেলেই দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরলেন বরুণ মিত্র।

পঞ্চাশের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো মানুষটি অভিযাত্রী নন। পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনে বিপাকে পড়া হাজারো মানুষের মধ্যে একজন। তবে লকডাউন তাঁকে অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে আটকে রাখতে পারেনি। মনোবল আর জেদকে সঙ্গী করে তিনি বাড়ি ফিরেছেন।

এক দশকেরও বেশি সময় আগে সংসারের তাগিদে বরুণবাবু মুম্বই পাড়ি দেন। পেপার প্রিন্টিংয়ের কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। লকডাউনে কাজ বন্ধ হতেই সমস্যা শুরু হয়। বাড়ি ফেরার কথা ভাবেন। কিন্তু ট্রেন, বাস তো বন্ধ! ঠিক করেন, পাড়ি দেবেন সাইকেলে। মার্চ মাসের বেতন মিলেছিল। তা থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠান। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সাইকেল কেনেন। গত ২৩ এপ্রিল বেরিয়ে পড়েন। একে একে মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন। বাংলা-ওড়িশা সীমান্তে পুলিশ অবশ্য আটকেছিল। উর্দিধারীদের প্রশ্নের মুখেও অবশ্য হাল ছাড়েননি তিনি। মহারাষ্ট্রে ফিরেও যাননি। তাঁর কথায়, ‘‘চাষের জমি, জঙ্গল আর সাইকেল কাঁধে তুলে ছোট নদী পেরিয়ে বাংলায় ঢুকে পড়ি।’’

২৩ দিনের যাত্রা শেষে হরিপালে পৌঁছন গত শুক্রবার। সোজা হরিপাল থানায় চলে যান। তার পরে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা হয়। বাড়ি ঢোকার অনুমতি মেলে।

রাস্তার গল্প বলছিলেন বরুণ। জানান, পথে সাইকেল আরোহী সাত পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ হয়। তাদের বাড়ি নদিয়ায়। ওড়িশা সীমান্ত পর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গে আসেন। ভোর ৩টে থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার বিশ্রাম। আবার বেলা ৩টে থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত চলত সাইকেল। পথে মন্দির, মসজিদ, গুরুদোয়ারা থেকে খাবার মিলেছে। রাতের আশ্রয় পেট্রোল পাম্পে। রাস্তায় বহু মানুষ সাহায্য করেছেন।

মা, স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে বরুণের সংসার। ছেলেরা পড়াশোনা করেন। বরুণ জানান, আপাতত এলাকাতেই কাজ খুঁজবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, পুরনো মালিক ডাকলে ফের পাড়ি জমাবেন আরব সাগরের পাড়ের রাজ্যে। স্ত্রী ডলির কথায়, ‘‘ভবিষ্যতের কথা সময়ই বলবে। আপাতত, ঘরের লোক ঘরে ফিরেছেন, এর থেকে আনন্দের আর কিছু হয় না।’’

বাড়ি ফিরতে পেরে পথের ক্লান্তি ভুলে আপাতত স্বস্তি মিলেছে। তবে বরুণের আক্ষেপ, সরকার স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরতে সময় দিল না। তাই ঝুঁকি নিয়েও হেঁটে বা সাইকেলে মাইলের পর মাইল পথ পেরনোর ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy