অবসর: কাজ নেই। তাই শুয়ে-বসেই দিন কাটানো। —নিজস্ব চিত্র
তাঁর নিজের ১১ জনের সংসার।
কারখানার ১৮ জন কারিগরের পরিবারের অন্ন-বস্ত্রের দায়িত্বও এক রকম তাঁর ঘাড়েই।
চলবে কী করে? ভেবে কূল পাচ্ছেন না পাঁচলার ধুনকি গ্রামের শেখ বাহারুদ্দিন।
অন্যান্য বার এই সময়ে তাঁর ব্যবসায় দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এ বার অখণ্ড অবসর, আর এক রাশ দুশ্চিন্তা। পেট চালাতে বাহারুদ্দিন নিজেই ত্রাণ খুঁজছেন।
বাহারুদ্দিন পেশায় জরি কারখানার মালিক বা ওস্তাগর। প্রতি সপ্তাহে তিনি কলকাতা থেকে কাজের বরাত আনতেন। নিজের কারিগরদের দিয়ে সেই কাজ করিয়ে ব্যবসায়ীকে দিয়ে আসতেন। সেই টাকায় নিজের কারবারের লাভ রাখতেন। কারিগরদেরও মজুরি দিতেন। একজন কারিগর দিনে ৩৫০-৪০০ টাকা রোজগার করতেন। এই কাজের মরসুম শুরু হতো ইদের বাজার দিয়ে।
সেই ইদ সামনেই। কিন্তু বাজার ধরে এ বার বাড়তি রোজগার করা হচ্ছে না বাহারুদ্দিনের। করোনা সব চৌপাট করে দিয়েছে। লকডাউন চলছে। কারখানা বন্ধ। বাহারুদ্দিনের নিজের রোজগার শেষ। একই হাল কারিগরদের।
বাহারুদ্দিনের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের কাজ দেশের নানা রাজ্যে এবং বাংলাদেশে যায়। বাংলাদেশেও করোনার জন্য লকডাউন চলছে। ফলে, সেখান থেকেও বরাত আসছে না। হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই।’’ ওই কারখানা-মালিকের আশঙ্কা, লকডাউন উঠলেও বাজার স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
বাহারুদ্দিনের কারিগরদের বাড়ি পাঁচলারই বিভিন্ন এলাকায়। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই বিপাকে পড়েছেন। বাহারুদ্দিন বলেন, ‘‘এই বিপদে আমি কারিগরদের কোনও সাহায্য করতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে। লকডাউনের যা টাকা পেয়েছিলাম, কারিগরদের দিয়েছি। তার পর থেকে কাজ বন্ধ। আমিই বা কোথায় টাকা পাব? নিজেও সংসার চালাতে পারছি না।’’
বাহারুদ্দিন এবং তাঁর কারিগররা কোনও সরকারি সাহায্য পাননি বলেও অভিযোগ। বিনামূল্যে অবশ্য চাল-আটা পেয়েছেন। কিন্তু তাতে ক’দিন চলে? প্রশ্ন বাহারুদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি ত্রাণ পেলে বেঁচে যাই।’’
এই দুর্দশার কাহিনি শুধু বাহারুদ্দিন বা তাঁর কারিগরদের নয়, পাঁচলার ঘরে ঘরে চলে জরির কাজ। ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের রাস্তা ধরে গেলে এই সে দিন পর্যন্ত দেখা যেত সারি সারি ‘খানা’। সেখানে কারিগররা বসে নিপুণ হাতে জরির নকশা তোলার কাজ করতেন। লকডাউনের পর থেকে সব কারখানার ঝাঁপ বন্ধ।
‘সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান মল্লিক বলেন, ‘‘পাঁচলা ছাড়াও এ রাজ্যের বহু জেলায় এখন জরির কাজ হয়। লক্ষ লক্ষ ওস্তাগর-কারিগর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। করোনা সব শেষ করে দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy