প্রতীকী ছবি।
ভুয়ো ক্লাবের নামে সরকারি অনুদানের চেক আরামবাগের এক তৃণমূল নেতা ‘হাতিয়ে’ নেওয়ায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করল জেলা প্রশাসন।
সোমবারই আনন্দবাজারে এই খবর প্রকাশিত হয়। আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লির বাসিন্দা নীতীশ ভট্টাচার্য নামে এলাকার এক তৃণমূল নেতা থানায় সই করে এক লক্ষ টাকার ওই চেক তুলে নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মঙ্গলবার হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘আরামবাগের ওই ঘটনার নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রশাসন পায়নি। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসায় বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই টাকা কার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বা কে টাকা তুলেছেন— সবটাই খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। তদন্তে সারবত্তা পেলে যে বা যাঁরা যুক্ত, সবাই আইনত শাস্তি পাবেন।’’
জেলা ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ আধিকারিক অলিভিয়া রায় বলেন, “কোন ক্লাব অনুদান পাবে, সে ব্যাপারে সুপারিশ করেন এলাকার বিধায়ক। ওই সুপারিশ আমাদের জেলা দফতরের মাধ্যমে যায় না। সরাসরি জমা পড়ে আমাদের রাজ্য দফতরে। সেখান থেকেই বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, অফিস খুললে নথি খতিয়ে দেখে রাজ্য স্তরে বিষয়টি জানাব।”
ভুয়ো ক্লাবের হয়ে শংসাপত্র তিনি দিয়েছিলেন কিনা, তা বলতে পারেননি আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। তবে, কে শংসাপত্র দিয়েছেন, তার তদন্ত চেয়েছেন তিনি। এ দিন বিধায়ক বলেন, ‘‘ক্লাবের জন্য শংসাপত্র বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী— যে কেউ দিতে পারেন। আমাদের মধ্যে কে শংসাপত্র দিয়েছেন দেখা হোক।”
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে যে ক্লাবের নামে গত ১১ এপ্রিল নীতীশ অনুদানের চেক তুলেছেন, সেই ক্লাবটির কোনও অস্তিত্ব নেই। তবে, অনুদান পাওয়ার জন্য শুধু ক্লাবের ভবন বা সুপারিশের শংসাপত্রই নয়, রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকাও বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন অনুদান পাওয়া কয়েকটি ক্লাবের কর্তা। একই কথা বলছেন বিধায়ক এবং ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা। ফলে, এ ক্ষেত্রে ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন নম্বরও ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে।
মঙ্গলবার সারাদিন ফোন ধরেননি নীতীশ। ফলে, তিনি কী ভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেলেন বা অনুদানের চেক ইতিমধ্যে তিনি ভাঙিয়েছেন কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
তবে, সোমবার ক্লাবের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নীতিশ দাবি করেছিলেন, ‘‘ক্লাবের আর এক কর্মকর্তা পিন্টু কোনার বলতে পারবেন।’’ ওই এলাকারই বাসিন্দা পিন্টু জানিয়েছিলেন, ক্লাবটা নেই। রেল স্টেশনের কাছে একটি দেবত্র জমিতে ক্লাবটা করতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন। পুলিশ ভেঙে দেয়।
গোটা ঘটনায় এখন তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন পিন্টু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার কাঁধে বন্দুক রেখে দুর্নীতি করা হয়েছে। আমার একটাই দোষ, নীতিশকে গত বছর আমাদের মন্দির তহবিলে সাহায্য করতে বলি। ও কিছু টাকা দিয়েছিল। তারপরে কী করে ক্লাব হল বা তার রেজিস্ট্রেশন হল— কিছুই জানি না। এখন বুঝছি, টাকা হাতাতে আমাকে জড়ানো হয়েছে।”
এ দিন সকালে অবশ্য নীতীশের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে দাবি করেন পিন্টু। তিনি বলেন, ‘‘কাগজে নিজের নাম দেখে সকালেই নীতিশকে বলেছি, ওই টাকায় চাল-ডাল কিনে এলাকার দুঃস্থ পরিবারকে খাওতে হবে। না হলে, আমি নিজে থানায় অভিযোগ করব। এরপর থেকে ওঁকে আর ফোনে বা বাড়িতে পাচ্ছি না।’’
কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের বহু ক্লাবকে তাদের মানোন্নয়নের জন্য সরকারি অনুদান দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সরকারের এই ‘খয়রাতি’ নিয়ে বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই সরব। ‘ভুয়ো ক্লাবে’র নাম নথিবদ্ধ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে, এ অভিযোগও কম ওঠেনি। ভুয়ো ক্লাবের নামে এক তৃণমূল নেতা চেক তুলে নেওয়ায় ফের সরব হয়েছে বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy