সুনসান: কাজ বন্ধ কারখানায়। —নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে চৌপাট হয়ে গিয়েছে ডোমজুড়ের সোনার গয়না শিল্প। মালিক-কারিগর সকলেরই অবস্থা শোচনীয়। বন্ধ রোজগার।
ডোমজুড়ের অলি-গলিতে গয়না কারখানা রয়েছে। সংখ্যায় অন্তত ৫০০। দু’ধরনের কাজ হয় সেখানে। সোনার গয়নায় হিরে বসানো এবং শুধু গয়না তৈরি। কারিগরের সংখ্যা প্রায় ছ’হাজার। কয়েকটি কারখানায় শতাধিক কারিগর থাকলেও বেশিরভাগে গড়ে ১০ জন করে কাজ করেন। কারিগরদের মধ্যে আবার দু’টি ভাগ— দক্ষ এবং অদক্ষ। দক্ষ কারিগররা মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। অদক্ষ কারিগররা গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা। লকডাউনের জন্য কেউ ভাল নেই।
এখানকার কারখানা মালিকদের অনেকেই মুম্বই থেকে বরাত নিয়ে কাজ করেন। কেউ আবার কলকাতার বড় বড় গয়নার দোকান থেকে বরাত পান। কারিগরদের দিয়ে কাজ করিয়ে তা পাঠিয়ে দেন। লেনদেন থেকে কারিগরদের বেতন ও অন্য কিছু খরচ বাদ দিয়ে মালিকদের লাভ থাকে। কিন্তু লকডাউনের জন্য কোনও জায়গা থেকে বরাত আসছে না।
প্রতাপ দাস নামে এক কারখানা-মালিক বলেন, ‘‘আমরা হিরের কাজ করি। মুম্বইয়ের বড় বড় দোকান থেকে বরাত আনি। এখন বরাত না-আসায় কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। কারখানার ১২০ জন কারিগরই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ভেবেছিলাম ১৪ এপ্রিল লকডাউন উঠে গেলে কাজ শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল। কারিগরদের লকডাউন শুরুর আগের দিন পর্যন্ত মজুরি দিয়েছি। কিন্তু তাতে ওঁদের কত দিন চলবে? ওঁরা সংসার চালাতে সমস্যায় পড়ছেন। দেখি ওঁদের কিছু আর্থিক সাহায্য করা যায় কিনা! এ ভাবে আর কত দিন চলবে?’’ একই খেদ নবকুমার দাস নামে আর এক কারখানা-মালিকের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি কলকাতা থেকে বরাত এনে কাজ করি। ২৮ জন কারিগর আছেন। সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। মানবিকতার খাতিরে ওঁদের কিছু টাকা দিয়েছি। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়।’’
কারখানাগুলির কারিগরদের বেশির ভাগই হাওড়া এবং হুগলি জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। দুই জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিতে ডোমজুড়ের গয়না কারখানাগুলি বড় ভূমিকা পালন করে। কারিগরদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে দুই জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিও। কারিগররা অপেক্ষা করছেন, কবে ফের কাজ শুরু হবে?
দুশ্চিন্তার মেঘ মালিকদের মনেও। প্রতাপবাবুর প্রশ্ন, ‘‘লকডাউন উঠে গেলেও অর্থনীতি তার ছন্দে ফিরতে পারবে কী? সেটা না হলে আমাদের বিপদ। মানুষের হাতে যদি টাকাই না থাকে, তাঁরা সোনা-হিরের গয়না কিনবেন কেমন করে?’’ একই প্রশ্ন নববাবুরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy