চলছে নমুনা সংগ্রহ। আরামবাগে। — নিজস্ব চিত্র
করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল হুগলিতে। সংখ্যার নিরিখে হুগলির স্থান এখনও রাজ্যে পাঁচ নম্বরই। হুগলিতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ২৯ মার্চ। তার পর থেকে ঢিমেতালে সংক্রমণ দেখা দেয়। চন্দননগর, শ্রীরামপুরের মতো শহরাঞ্চলে কিছু জায়গায় সেই সময় সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। সংক্রমণ এক হাজারে পৌঁছয় তিন মাসে অর্থাৎ জুনের শেষে। জেলা প্রশাসনের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করায় গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণ শুরু হয়। জুন মাসের ৮ তারিখ থেকে শুরু হয় আনলক-পর্ব। তার পর থেকেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত এক মাসে প্রায় পাঁচ হাজার জন সংক্রমিত হয়েছেন। সোমবার রাজ্য প্রশাসনের বুলেটিন অনুযায়ী, এই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৩৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ হাজার ৬৪৬ জন সেরে গিয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১৭৭ জন। অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ১৪১৫ জন।
তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি মোটেই উদ্বেগজনক নয়। বরং তা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, শুরুতে খুবই কম পরীক্ষা করা হচ্ছিল। সময়ের সাথে সাথে প্রকৃত চিত্র বুঝতে পরীক্ষার হার ক্রমেই বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক তিন হাজারের কাছাকাছি পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা অনুযায়ী আক্রান্তের হার বেশি নয়। প্রতি হাজার পরীক্ষা পিছু জনা পঞ্চাশ মানুষের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। অধিকাংশই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। প্রায় ৮০% সংক্রমিতের চিকিৎসা বাড়িতেই করা হচ্ছে। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘প্রায় দেড় লক্ষ লোকের পরীক্ষা আমরা সেরে ফেলেছি। গ্রাম, শহর সর্বত্রই পরীক্ষা করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে বহু জায়গা এখনও সংক্রমণ মুক্ত।’’
প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, হুগলির বিভিন্ন এলাকা ঘিঞ্জি। কল-কারখানা খুলে যাওয়ার পরে লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে। কাজের সূত্রে বহু মানুষ হাওড়া বা কলকাতায় যাতায়াত করেন। এই সব কারণে বিশেষত হাওড়া বা কলকাতা লাগোয়া কিছু জায়গায় সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। তবে, পরিস্থিতির উপরে প্রশাসন সর্বদা নজর রাখছে। জেলার প্রতি প্রান্তের করোনা পরিস্থিতি নিয়মিত বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা দেখে সংক্রমিতকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। প্রাণহানির সংখ্যা যাতে যথাসম্ভব কমানো যায়, তার জন্য অক্সিজেন-নির্ভর চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। যে সব সংক্রমিতরা বাড়িতে থাকছেন, টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, লকডাউনে অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছিল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। সেই জন্য মানুষের বাইরে বেরনো ছাড়া গতি নেই। তবে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে হলে মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি। মানুষ এখন এটা বুঝতে পারছেন। গ্রামাঞ্চলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরতে ভুলছেন না।’’
চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, এখনই সংক্রমণ পুরোপুরি বাগে আসবে না। বরং ট্রেন চলাচল শুরু হলে তা বাড়তে পারে। চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘আমার কাছে দিনে গড়ে পঞ্চাশ জন রোগী এলে তার ৭০-৮০ শতাংশই জ্বর, সর্দি-কাশি, বমি-পায়খানা, গায়ে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছেন। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করছি, কোভিড পরীক্ষা করাতে বলছি। কোভিড পজ়িটিভ হয়েছেন, এমন অনেকেই বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। জ্বরের উপসর্গ থাকলে লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজেরা সচেতন থাকলেই এই রোগকে অচিরেই বাগে আনা যাবে।’’প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাস, মানুষকে সচেতন করতে প্রচার জারি থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy