ফাইল চিত্র
একটা লাউ ৫০ টাকা!
২২ টাকা কেজি আলু পৌঁছেছে ২৮ টাকায়।
ক’দিন আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ২০ টাকা। সোমবার ২৮-৩০ টাকা!
করোনার জেরে এ দিন বিকেল থেকে ‘লকডাউন’ গোটা হাওড়া জেলা এবং হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা। তার আগে সকালে বাজারে গিয়ে হাত পুড়ল সাধারণ মানুষের। কিন্তু কেউই খালি হাতে ফেরেননি। বরং, ব্যাগ ভরে বাজার করেছেন। কী জানি, কী হয়!— এই আশঙ্কা প্রায় সকলেরই। এই সুযোগে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মেরেছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীও। বেলা একটু বাড়তেই তাঁদের ভাঁড়ারও ফাঁকা।
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় রাজ্যে ত্রাহি রব। আনাজ এবং মাছের জোগান নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করছেন, জোগান বন্ধ হবে না। কারণ, মাছ এবং আনাজের গাড়ি লকডাউনের আওতার বাইরে। তবু কে শোনে কার কথা!
হুগলির উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, চন্দননগর, চুঁচুড়া, আরামবাগ—বিভিন্ন বাজারে দেখা গেল একই ছবি। এ দিন সকালে মাহেশের শহিদ বাজারে গিয়ে দাম শুনে থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘দাম কিছুটা বেশি হবে, জানাই ছিল। কিন্তু তা বলে এত? একটা লাউ ৫০ টাকা! মাঝারি মানের বাঁধাকপি ৪০ টাকা কেজি। তবু কিনতে হল।’’ এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘পেঁয়াজ, আলু, আনাজ সব কিছু কিনতেই অন্তত ১০-১৫ মিনিট দাঁড়াতে হয়েছে। এত ভিড় কোনও দিন দেখিনি।’’
পাছে বাজারে চাল ‘বাড়ন্ত’ হয়ে যায়, তাই অনেকেই বেশি করে চাল কিনে বাড়িতে মজুত করছেন। গড়পরতা সব মাছের দামই অন্যান্য দিনের তুলনায় অন্তত ৫০ টাকা কেজিতে বেশি ছিল।
অথচ, বাজারে যাতে আলু-আনাজের দাম না বাড়ে, সে জন্য হুগলির বিভিন্ন বাজারে গত দু’দিন ধরে হানা দিয়েছিল পুলিশ। সতর্ক করা হয়েছিল বিক্রেতাদের। কিন্তু সেই অভিযান সর্বত্র কাজে আসেনি। বরং জেলায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা হতেই পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়।
কেনাকাটার ধুম কেমন?
উত্তর দিলেন উত্তরপাড়ার কাঁঠাল বাগান বাজারের এক আলু বিক্রেতা। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যদিন ৫০ কেজি প্যাকেটের (এক বস্তা)আলু দুপুর ১২টার চড়া রোদে বসেও বিক্রি করতে পারি না। আর আজ দু’বস্তা আলু বিক্রি করেছি সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে। ছোট আলুও ২২ টাকা কেজি দরে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।’’ শখের বাজারে এক ক্রেতা বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি আনাজের দাম বেশি চাইছে। কিন্তু কী করব? চার দিন চালাতে হবে। তারপরে ট্রেন চলবে কিনা জানি না। তখন দাম হয়তো আরও বাড়বে।’’
এই আশঙ্কা কি অমূলক?
এ রাজ্যের অন্যতম বড় আনাজের হাট বসে শেওড়াফুলিতে। হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা তো বটেই, অন্য জেলা, এমনকি কলকাতা থেকেও ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে আনাজ কিনে নিয়ে যান। হাটে আনাজ আসে মূলত ট্রেন এবং সড়কপথে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ট্রেন বন্ধ থাকায় সড়কপথের উপরে নির্ভর করতে হবে।
‘শেওড়াফুলি কাঁচা সব্জি ব্যবসায়ী সমিতি’র কর্মকর্তা মুকুল সাহা বলেন, ‘‘যে হেতু আনাজের ট্রাকে নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই জোগান বন্ধ হবে না। ভিন্ রাজ্য থেকেও কিছু আনাজ আসে। যেমন এই সময় রাঁচি থেকে কড়াইশুঁটি, কেরল-ওড়িশা সীমান্তের এঁচোড়, ধানবাদের ডাঁটা আসে। সেগুলোও আশা করছি আসবে।’’ তবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলে কিছু ক্ষেত্রে আনাজের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
হুগলি চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বসু বলেন, ‘‘পরিবহণের সমস্যার জন্য মাছ বা আনাজের জোগান কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ছোট ব্যবসায়ীদের কিছুটা বাড়তি খরচও হবে আনাজ বা মাছ বাজারে নিয়ে আসতে। তবে জোগান যে বন্ধ হবে না, সে কথা বলাই যায়। তাই মানুষের অতিরিক্ত চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’
তবু এ দিন শেওড়াফুলি হাটে আনাজের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ ‘পোস্ট’ করেন। ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তাদের দাবি, কেউ যাতে বাড়তি দাম না নেন, তা নিয়ে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়েছে। সংগঠনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বাড়তি দাম নেওয়ার পিছনে সাধারণ মানুষ অনেকাংশে দায়ী। অকারণে আশঙ্কিত হয়ে তাঁরা প্রচুর বাড়তি আনাজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলেই সমস্যা বাড়ছে।’’
শ্রীরামপুর স্টেশনের পাশেই মাছের বড় পাইকারি বাজার। অন্দ্রপ্রদেশ থেকে প্রচুর রুই-কতলা, তেলাপিয়া আসে। এখান থেকে বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা ছোট বাড়িতে বা ট্রেনে মাছ নিয়ে যান। মাছ ব্যবসায়ী তথা শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে অন্ধ্রের রুই-কাতলার প্রচুর চাহিদা। মাছের ট্রাক যেহেতু ছাড় আছে, তাই জোগান বন্ধ হওয়ার তো কথা নয়। তবে জোগান একটু কমতে পারে।’’
উলুবেড়িয়ার বাজারগুলিতে এ দিন আলু ও মাছের জোগানে টান ছিল। আলু ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সাধারণ মানুস বস্তা বস্তা আলু কিনে বাড়িতে মজুত করেছেন। তা ছাড়া। মাত্র তিন দিনের মধ্যে জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং স্কুলগুলির মিড-ডে মিলের জন্য প্রচুর আলু তুলে নেয় সরকার। তার ফলেই আলুর জোগানে এ দিন টান পড়ে। তবে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। আলু ছাড়া অন্য আনাজের দাম এখানে অবশ্য খুব একটা বাড়েনি বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। কিন্তু বাজারে ভিড় ছিল খুবই। ভিড় ছিল মুদিখানাতেও। উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা সাইদুর রহমান ৫০০ গ্রাম মুগ ডাল কিনতে প্রায় ২০ মিনিট দোকানে দাঁড়িয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy