Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Howrah-Hoogly

অজ্ঞতায় স্বাস্থ্যকর্মীকে দূরে ঠেলছেন সহ-নাগরিক

গত আড়াই মাসে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত লোকেরা নানা ক্ষেত্রে কার্যত সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছেন!

হাসপাতালেই প্রসাধনী সামগ্রীর কাউন্টার। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালেই প্রসাধনী সামগ্রীর কাউন্টার। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

এক বছরের ছেলে অসুস্থ। কোভিড হাসপাতালের নার্স মাকে শুক্রবার সেই খবর জানিয়ে আত্মীয়েরা বলেন, বাড়ি ফিরতে হলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। নচেৎ পড়শিরা বাধা দিতে পারেন। অগত্যা ওই যুবতী পরীক্ষা করান। সোমবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট হাতে ছেলের কাছে ছোটেন। অর্থাৎ ১০ কিলোমিটার পথ যেতে চার দিন লেগে যায়।

ছুটিতে সিঙ্গুরের বড়ায় বাড়ি ফিরেছিলেন এক আয়া। কিছু পড়শি হুমকি দেন, কোভিড-হাসপাতালে কাজ করলে বাড়ি ফেরা চলবে না।

গত আড়াই মাসে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত লোকেরা এ ভাবেই নানা ক্ষেত্রে কার্যত সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছেন! এখানে করোনা সন্দেহভাজন প্রথম আসেন গত ১৫ এপ্রিল। চেনা পরিবেশ বদলে যায়। হাসপাতালে মুদি সামগ্রী দিয়ে যেতেন এক ব্যক্তি। তিনি আসা বন্ধ করে দেন। একই পথ নেন দুধওয়ালা। বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীকে হুমকির মুখে পড়তে হয়। সাবান, শ্যাম্পু, তেল, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা চানাচুর-বিস্কুটের দোকানিরাও মুখ ফিরিয়ে নেন।

স্বাস্থ্যকর্মী মৌসুমী দাস, সৌরভ সিংহ মহাপাত্র, জারমনি সরেন, দীপালি মাহাতো, মর্জিনা খাতুনদের কথায়, ‘‘সে এক আজব অবস্থা। আমরা যেন অচ্ছুৎ। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা।’’ পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান খোলা হয়।

হাসপাতালের সদস্য শঙ্কর নন্দী এবং শিল্পী ঘোষ ওই দোকান চালান। চাল-ডাল-তেল-নুনও হাসপাতাল কর্মীরা কিনে আনেন।

উল্টো ছবিও রয়েছে। দীর্ঘদিনের দুধওয়ালা আসতে অস্বীকার করার ক’দিন পরেই অন্য এক জন যেচে দুধ সরবরাহের দায়িত্ব নেন। লকডাউনে ব্যবসা বন্ধের সময় এলাকার ছোট একটি মিষ্টির দোকানের মালিক বাড়িতে মিষ্টি বানিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে গিয়েছেন বিনা পয়সায়।

হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এক দিকে কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছে। অন্তপ্রান্তে ব্লাডব্যাঙ্ক। অনেকে ব্লাডব্যাঙ্কে আসতে চাইছিলেন না। রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পরিচিতদের চেষ্টায় পরিস্থিতি শুধরোয়।’’
যে বড়বেলুতে স্বাস্থ্যকর্মীকে হুমকি শুনতে হয়েছিল, সেখানে কিছুদিন আগে রক্তদান শিবির হয়েছে এক পঞ্চায়েত সদস্যের উদ্যোগে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের একঘেয়েমি কাটাতে মনোবিদ-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ হাসপাতালে এসে বিনা পারিশ্রমিকে ক্লাস নিয়েছেন। কারও মানসিক সমস্যা থাকলে আলাদা কাউন্সেলিং করেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থার খবর পেলে পুলিশ ছুটে গিয়েছে।
তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলায়নি।

হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীরামপুরের বড়বাগানে একটি ছাপাখানায় গিয়েছিলেন। স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁকে আসতে নিষেধ করেন। গৌতমের খেদ, ‘‘কঠিন পরিস্থিতিতে সমাজকে পরিষেবা দিয়ে অসম্মানিত, মানসিক ভাবে বিপন্ন হতে হবে?’’ বুধবার অবশ্য স্থানীয় কয়েক জনের মধ্যস্থতায় ওই যুবক হাসপাতালে এসে দুঃখপ্রকাশ করে যান।
মোহিত বলেন, ‘‘অজ্ঞতা এবং স্বার্থপরতার জন্য অনেকে এমন আচরণ করেন। এই মানুষগুলো যে সমাজ অর্থাৎ আখেরে তাঁর জন্যই লড়ছেন, বেমালুম ভুলে যান।’’

শ্রীরামপুর কলেজের শিক্ষক প্রভাকর ভট্টাচার্য এরজন্য করোনা-ভীতিকে দায়ী করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভীতি চেতনাকে গ্রাস করে। তখনই বিচারবুদ্ধি হারিয়ে কিছু মানুষ এমন আচরণ করেন। এই পরিস্থিতি কাটাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, সংবাদমাধ্যমের সদর্থক প্রচারের প্রয়াস বাড়াতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Howrah-Hoogly Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy