কাজের ফাঁকে নিজস্বী। রাহুল এবং রাজ।
ওঁরা ছ’জন।
কেউ টোটো-চালক, কেউ বন্ধ চটকলের কর্মী, কেউ বা অন্য ছোটখাটো কাজ করেন। করোনা-জুজুতে সবাই যখন আতঙ্কিত, ওঁরা ছুটেছিলেন হাসপাতালে। নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে নয়, করোনা-আক্রান্ত সন্দেহে আসা রোগীদের পরিচর্যা করতে। চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়ছেন ‘করোনা-যুদ্ধ’। দৈনিক মজুরির বিনিময়ে তাঁরা করোনা রোগীদের পরিচর্যায় কাজ করলেও সকলেই একবাক্যে জানিয়ে দিয়েছেন, মজুরি তাঁদের কাছে গৌণ।
মার্চ মাসের শুরু থেকেই প্রশাসন জেলায় জেলায় করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে শুরু করে। সেই মতো শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালেও তৈরি হয় করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ড। এখানে আসা রোগীদের পরিচর্যার জন্য কিছু অস্থায়ী কর্মী নেওয়া হয়। সেখানেই স্বেচ্ছায় নিজেদের নাম লেখান শ্রীরামপুরের রায়ঘাট লেন এবং মাহেশের ওই ছয় যুবক। তাঁদের মধ্যে মেহতাব হোসেন নামে এক যুবক বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা লোকজনকে এই ওয়ার্ডে আনা হচ্ছিল। আমরা সারাক্ষণ ওঁদের খেয়াল রাখছিলাম। ওঁরা যেখানে হাত দেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা সাফাই করতে হয়। শৌচাগারের ক্ষেত্রেও তাই। ওঁদের খাবার এবং জল এগিয়ে দেওয়ার কাজও আমরাই করি।’’
সম্প্রতি শেওড়াফুলির এক প্রৌঢ় করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁর সংস্পর্শে থাকায় বেশ কয়েক জনকে ভর্তি করা হয়েছিল ওয়ালশে। তাঁদের মধ্যে প্রৌঢ়ের ভাই এবং ছেলের শরীরেও ওই ভাইরাস মেলে। তাঁদের কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই দু’জনের পরিচর্যা করায় আপাতত ওই ছয় যুবককে সিঙ্গুরের সরকারি কোয়রান্টিন শিবিরে পাঠানো হয়েছে। যুবকেরা ছটফট করছেন, নিভৃতবাস-পর্ব শেষ হলেই ফের করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে।
এই ভাইরাসের ঝুঁকির কথা জানা ছিল না?
প্রশ্ন শুনে মোবাইলে মহম্মদ রাজ নামে এক যুবকের জবাব, ‘‘জানি বলেই তো এই কাজ করতে এসেছি। দেশের সঙ্কটে কাজে লাগতে পারছি, এটা আমার স্বপ্নপূরণ হল বলতে পারেন। সবাই পিছিয়ে গেলে কী করে হবে?’’ মজুরির প্রশ্নে সাতাশ বছরের যুবকের মন্তব্য, ‘‘বিশ্বাস করুন, টাকার কথা ভাবিনি। একটা বিষয়ই খারাপ লাগে, বাড়িতে ফিরলে বন্ধুরাও সে ভাবে আমাদের সঙ্গে মেশে না। তবে আমার মা বলেছে, ভাল জিনিস করতে হলে এ সব কিচ্ছু না। তাই আর মন খারাপ করছি না।’’
জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ছ’জনই সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। শুধু নজরদারির জন্য তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। রাহুল পাসোয়ান, চিরঞ্জিৎ দাস, ভগীরথ নন্দ এবং সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় নামে আরও তিন যুবকও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কেউ ‘ডরনেওয়ালা’ নন।। কারণ, ‘স্যারেরা’ (চিকিৎসক) তাঁদের বলেছেন, ঠিকঠাক সতর্কতা নিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো যায়।
ছ’জনের এই ‘লড়াই’কে কুর্নিশ জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের ভূমিকায় আমরা গর্বিত। ওঁরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে সত্যিই অনুপ্রাণিত করছেন।’’ শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহও প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘‘ওঁরা সবাই কোয়রান্টিন থেকে বেরিয়েই আবার এই কাজ করবেন বলছেন। ওঁদের এই লড়াকু মানসিকতা, মনোবলের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’ সন্তোষ জানিয়ে দেন, শুক্রবার দুই মহিলা-সহ আরও ছ’জন ওয়ালশে যোগ দিয়েছেন ওই কাজ করার জন্য।
ছয় যুবকের আর্তি একটাই, ‘‘সবাই লকডাউন মেনে চলুন। সবাই দূরে দূরে থাকলেই ভাইরাস আমাদের ছুঁতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy