অস্ত্র কারখানা থেকে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
বড় দোতলা বাড়ি। বাড়ির একতলার দু’টি ঘর থেকে সারাক্ষণ খুটখাট শব্দ আসত। আশপাশের লোকজনের ধারণা ছিল, গাড়ির ছোটখাটো যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ হচ্ছে সেখানে! বুধবার দুপুরে সেই ঘরে ঢুকে চোখ কপালে ওঠে পুলিশ অফিসারদের। দেখেন, ঘরটি কার্যত হয়ে উঠেছে অস্ত্র কারখানা! সেখানে রয়েছে অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জাম আর অর্ধসমাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। অস্ত্র-কারবারে জড়িত অভিযোগে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। প্রত্যন্ত কোনও এলাকা নয়, অস্ত্র তৈরির এই কারখানা রমরমিয়ে চলছিল হুগলির শ্রীরামপুর শহরে।
কেমন করে খোঁজ মিলল ওই অস্ত্র কারখানার?
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকার স্ট্র্যান্ড রোড থেকে দুই অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করে। তাদের থেকে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র মেলে। ধৃত সুজাত গোস্বামী ও মহম্মদ শাহিদ শ্রীরামপুরের বাসিন্দা। আদালত তাদের আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের জেরা করেই শ্রীরামপুর উপ-সংশোধনাগারের কাছে ঋষি বঙ্কিম সরণিতে সুজাতর বাড়িতে ওই অস্ত্র কারখানার সন্ধান পায় পুলিশ। এ দিন কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এবং শ্রীরামপুর থানার পুলিশ সুজাতর বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে গিয়েই পুলিশকর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ। তাঁরা দেখেন, একটি ঘরে পড়ে রয়েছে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম এবং অর্ধসমাপ্ত কিছু অস্ত্র। সেগুলি ছাড়াও সেখান থেকে একটি লেদ মেশিনও বাজেয়াপ্ত করা হয়। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘ওখানে একটি অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলেছে। ওই অস্ত্র কারবারি কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হেফাজতে রয়েছে। ওকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করব। কত দিন ধরে সে ওই কাজ করছিল, কোথা থেকে কাঁচামাল আনত, তৈরি হওয়া অস্ত্র কোথায় সরবরাহ করত, খদ্দের কারা— এই সব বিষয়ই তদন্ত করে দেখা হবে।’’
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ রমেশ দাস ওরফে লেঙরি নামে এক দুষ্কৃতীকে শহরের জলকল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, তার কাছেও একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। জেরায় লেঙরি স্বীকার করে, গত এক বছর ধরে সুজাতর সঙ্গে সেও অস্ত্র কেনাবেচার কাজে জড়িত। সুজাতর বাড়ির কাছেই হাসপাতাল লেনে বাড়ি লেঙরির। আগেও সে অস্ত্র কেনাবেচার অভিযোগে ধরা পড়েছিল।
কমিশনারেটের একটি সূত্রের বক্তব্য, অস্ত্র কারখানার পিছনে দুষ্কৃতী চক্রের যোগ রয়েছে। সামনেই বিধানসভা ভোট। নির্বাচনে গোলমাল পাকানোর জন্য দুষ্কৃতীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে কিনা, পুলিশ তা খতিয়ে দেখবে। লেঙরিকে বুধবার শ্রীরামপুর আদালত ৭ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ওই এলাকায় শুধু জেলখানাই নয়, রয়েছে কমিশনারেটের একাধিক কর্তার কার্যালয়। পুলিশের নজর এড়িয়ে কী ভাবে সেখানে রমরমিয়ে অস্ত্র কারখানা চলছিল, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এটাই প্রথম নয়। দু’বছর আগে চন্দননগরের সাবিনাড়ায় অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছিল। ধরা পড়ে তিন কারবারি। আগ্নেয়াস্ত্র, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত হয়। ২০১৬ সালে ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস এলাকাতেও অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy