Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
TMC

দুর্গতদের ত্রাণ বিলিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব তৃণমূলেই

দিন কুড়ি আগে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছিল খানাকুল-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গত হয়েছিলেন বহু মানুষ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  ও পীযূষ নন্দী
খানাকুল শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৪৪
Share: Save:

দিন কুড়ি আগে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছিল খানাকুল-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্গত হয়েছিলেন বহু মানুষ। ত্রাণের ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই ত্রাণ বিলিকে ঘিরে শাসকদলের অন্দরে কাজিয়া এবং সমন্বয়ের অভাব সামনে এল।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা দিয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ত্রাণে সরকারের তরফ থেকে মিলেছিল ১ লক্ষ ‘ক্যানড ফুড’ (তৈরি খাবার)। সে দিনই শ্রীরমাপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও, মহকুমাশাসক (আরামবাগ) নৃপেন্দ্র সিংহ-সহ ব্লক আধিকারিকরা দুর্গত এলাকায় ওই ত্রাণের একাংশ বিলি করেন। বাকি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকায় পাঠিয়ে দেন। এরপরে ১০ সেপ্টেম্বর আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার বিস্কুট, ত্রিপল-সহ নানা ত্রাণ সামগ্রী একই জায়গায় বিলি করেন।

শ্রীরামপুরের সাংসদের হাত দিয়ে যে ত্রাণ বিলির সূচনা হবে, এ কথা জানতে না-পেরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই কর্মসূচির কথা তাঁদের জানানো হয়নি। অপরূপার ত্রাণ বিলির কথাও না-জানার দাবি করেছেন কেউ কেউ।

তবে, বেশি জলঘোলা হচ্ছে কল্যাণবাবুদের ত্রাণ বিলি নিয়ে। ওই খাবারের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দলের কেউ কেউ। বিশেষত মাড়োখানা, জগৎপুর এবং রাজহাটি-১ পঞ্চায়েত এলাকার কিছু নেতার অভিযোগ, ওই খাবার পচা, পোকাধরা। কৌটো থেকে খাবার খুলে এলাকায় দেখানোও হয়। তৃণমূলের একাংশের দাবি, যাঁরা প্রথম দফার ত্রাণ বিলি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তাঁরা অপরূপার অনুগামী।

মাড়োখানা পঞ্চায়েত এলাকার সুন্দরপুর গ্রামের নেতা সমর সামন্ত বেশ কিছু কৌটো থেকে রাস্তার ধারে খাবার ফেলে দিয়ে কল্যাণবাবুর খানাকুলে এসে ত্রাণ দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। সমরের অভিযোগ, “কল্যাণবাবুর এখানে আসার দরকার কী ছিল? তিনি দলে ভাগ করছেন। ক’দিন পরেই আবার অপরূপা পোদ্দার ত্রাণ নিয়ে হাজির হলেন। এ বার বৃষ্টির জলে সামান্য কিছু মাঠ ডুবেছে। তাতেই এই ত্রাণ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় হিতে বিপরীত হচ্ছে।”

ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য নজিবুল করিম বলেন, “কল্যাণবাবু যে খানাকুলে এসে ত্রাণ দেবেন, তা আমরা কেউ জানতে পারিনি। জানানোও হয়নি। যে খাবার দেওয়া হয়েছে, তা খারাপ বলেই শুনেছি। আবার সাংসদ অপরূপা পোদ্দার যে এসে ত্রাণ বিলি করেছেন, তা-ও জানতে পারিনি।”

প্রথম দফায় বিলি করা খাবারের গুণমান খারাপ থাকার কথা মানতে চাননি ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। রাস্তা জলে ডুবে থাকায় গত ৫ সেপ্টেম্বর ওই ত্রাণ প্রথমে গ্রহণ (রিসিভ) করেছিলেন খানাকুল-১ ব্লকের বিডিও দেবাশিস মণ্ডল। তাঁরা খাবার পরীক্ষা করে তা খানাকুল-২ ব্লক প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। দেবাশিসবাবুর দাবি, ‘‘আমি নিজে এবং আরও ৫ আধিকারিক কৌটোর খাবার গরম করে খেয়ে দেখেছি। সুন্দর পাতলা খিচুড়ি। চাল-ডাল, আলু, আনাজ—সবই ছিল। কোনও গোলমাল ছিল না।” খানাকুল-২ ব্লকের বিডিও দেবল উপাধ্যায় বলেন, “ত্রাণের খাবারের মান নিয়ে আমাদের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি।”

তা হলে অভিযোগ উঠছে কেন?

সাংসদ কল্যাণবাবু বলেন, “কারও একজনেরই অভিযোগ এটা। তাঁর লক্ষ্য আমি। কিন্তু আমি তো নিজের উদ্যোগে দিইনি। সরকারি ত্রাণ। গরম জলে ফুটিয়ে খেতে হয়। খাবার খারাপও নয়। আসলে আমি আরামবাগে ঢোকায় অনেকের অসুবিধা হচ্ছে।’’

সাংসদ অপরূপা বলেন, ‘‘আমারবাগে যে কেউ-ই আসতে পারেন। সমস্যা কোথায়? আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে সব সয়ই চেষ্টা করেছি, করবও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC RELIEF CONFLICT
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy