উত্তপ্ত: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে র্যাফ ও পুলিশ বাহিনী।
দু’দিন ধরে নিখোঁজ উলুবেড়িয়ার রাজাপুরের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর দেহ মিলেছিল শনিবার। বাগনান স্টেশনের কাছে রেললাইন থেকে। সহপাঠী তাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল রাজাপুরে।
পথ অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠি চালাতেই তেতে ওঠে এলাকা। গ্রামবাসীদের সঙ্গে শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা বোমা, ইট এবং অ্যাসিডের বোতল ছোড়া হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। ঘটনায় জখম হন রাজাপুর থানার ওসি অজয় সিংহ-সহ কয়েকজন পুলিশকর্মী এবং গ্রামবাসী। শেষে পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। গোলমালে জড়িত অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এক মহিলা-সহ চার জনকে আটক করে। কয়েকটি অ্যাসিডের বোতলও উদ্ধার করা হয়।
ওই ছাত্রীর যে সহপাঠীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে, শুক্রবারই তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে, ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে। তখনও ছাত্রীর দেহ মেলেনি। সে দিনই তাকে উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করায় পুলিশ। বিচারক ছেলেটিকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
রাস্তার পাশে শুকনো পাতায় ধরিয়ে দেন গ্রামবাসীরা। সেই আগুন নেভানোর ব্যস্ততা পুলিশের। ছবি: সুব্রত জানা
ঠিক কী কারণে এ দিনের গোলমাল?
রেল পুলিশের অনুমান, ওই ছাত্রী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। কিন্তু তা মানতে চাননি তার পরিবারের লোকজন এবং গ্রামবাসীদের একাংশ। ধৃত কিশোরই ধর্ষণ-খুনে জড়িত এই অভিযোগ তুলে তাঁরা এ দিন রাজাপুর থানায় গিয়ে ছাত্রীর মৃত্যুর মামলায় এ সংক্রান্ত ধারা যোগ করার দাবি জানান। কিন্তু পুলিশ তা করেনি। এর পরেই গ্রামবাসীরা থানা থেকে বেরিয়ে এসে বেলা আড়াইটে নাগাদ সুমদা বাজারে হোগলা এবং টায়ার জ্বালিয়ে তুলসীবেড়িয়া-কুলগাছিয়া রোড অবরোধ শুরু করেন। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ লাঠি চালায়। গোলমাল বড় আকার নেয়।
কেন নতুন অভিযোগ নিল না রাজাপুর থানা?
ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগ, ‘‘মেয়েকে তার যে সহপাঠী ধর্ষণ ও খুন করেছে তা জানানো সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে ঘটনাটিকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।’’ এ কথা অস্বীকার করে হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘রেল পুলিশ যেহেতু ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে, তাই তাদের কাছ থেকে এই মামলা হস্তান্তর না-হওয়া পর্যন্ত কিছু করা সম্ভব নয়।’’ রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই ছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। তাতে কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনমতো ধারা যোগ করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী ও তার সহপাঠীর বাড়ি একই গ্রামে। দু’জনে একই স্কুলের, একই ক্লাসের পড়ুয়া। বাগনানে স্কুলের সরস্বতী পুজো দেখার জন্য ছাত্রীটি বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর ফেরেনি। পরে তার পরিবারের লোকজন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সে স্কুলেই যায়নি। কয়েকজন গ্রামবাসীর থেকে তাঁরা জানতে পারেন, ওই সহপাঠীর সঙ্গে মেয়েটিকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ছাত্রীটির বাবা ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন থানায়।
জেরায় পুলিশের কাছে ছেলেটি দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সে ওই ছাত্রীর সঙ্গে ছিল। তারপরে মেয়েটি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে চলে যায়। তারপর সে আর কিশোরীর বিষয়ে কিছু জানত না। এই দাবি কতদূর ঠিক, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে
পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy