Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chinsurah

চুঁচুড়ায় বাড়িতে ফাটল, ভাঙল কাচ

তারপরে যা হল, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না গঙ্গার এ পাড়ের চুঁচুড়া শহরের বাসিন্দারা। তিনটি ওয়ার্ড জুড়ে একের পর এক বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরল।

প্রতিক্রিয়া: ফেটে গিয়েছে জানলার কাচ। চুঁচুড়ার একটি বাড়িতে। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রতিক্রিয়া: ফেটে গিয়েছে জানলার কাচ। চুঁচুড়ার একটি বাড়িতে। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৪
Share: Save:

ও পাড়ে একটা বিকট আওয়াজ। আকাশ জুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।

তারপরে যা হল, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না গঙ্গার এ পাড়ের চুঁচুড়া শহরের বাসিন্দারা। তিনটি ওয়ার্ড জুড়ে একের পর এক বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরল। ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়ল জানলা-দরজা, আলমারির কাচ। কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়লেন।

অনেকে প্রথমে ভেবেছিলেন, বাজ পড়ছে। কেউ ভাবেন, ভূমিকম্প হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই ও পাড়ে, নৈহাটির গৌরীপুরে গঙ্গার ধার থেকে পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা বাজির মশলা ও রাসায়নিক নিষ্ক্রিয় করার কাজ দেখছিলেন চুঁচুড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে তার অভিঘাত চুঁচুড়ার গঙ্গার ধার বরাবর তিনটি ওয়ার্ডেও (১২, ১৩ ও ২০ নম্বর) এসে পড়বে, কে ভেবেছিলেন! শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন বাসিন্দারা। অবরোধ তো হলই, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর এবং অন্য পুলিশকর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভও হল।

জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, সেই হিসেব করা হচ্ছে। রিপোর্ট তৈরি হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ বিক্ষোভের মধ্যে দাঁড়িয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এটা দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের তীব্রতা কেন এতটা হল, তা নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখা হবে।’’

এ দিন বেলা ২টো নাগাদ যখন ওই ঘটনা ঘটে, তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখে বকুলতলা ও সংলগ্ন এলাকার কয়েকশো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। পাইপ ফেলে রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। খবর পেয়ে চুঁচুড়া থানার পুলিশ আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং চুঁচুড়া মহকুমাশাসক দফতরের আধিকারিক সৌমেন দাস। বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নেন। পরে বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে গেলাম। জেলাশাসক এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’

বকুলতলা, জোড়াঘাট, পঞ্চাননতলা, তামালিপাড়া, রাসমনি ঘাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় কাচ ছড়ানো। বিভিন্ন বাড়ির ভিতরেও একই অবস্থা। কারও জানলার কাচ আস্ত নেই। কারও বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। বাণীব্রতা সামন্ত নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘বেলা ২টো নাগাদ সবে খেয়ে উঠেছি। বিকট শব্দে বাড়ি কেঁপে উঠল। জানলা, শোকেস, আলমারির কাচ ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল। দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। আমার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, কিশোরী মেয়ে সবাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। মেয়ে ভয়ে দোতলা থেকে নেমে আসে।’’

পেশায় স্কুলশিক্ষক শুভময় মজুমদারের ক্ষোভ, ‘‘আমার মায়ের বয়স আটাত্তর বছর। প্রচণ্ড শব্দে মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলার পাল্লা ভেঙে পড়ে গিয়েছে। দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।’’ তাঁর পড়শি কুমকুম বসু মজুমদারও দেখাচ্ছিলেন, কী ভাবে একের পর এক জানলার কাচ ভেঙেছে। বিক্রমজিৎ কোলের বাড়ির সামনে রাস্তাময় কাচ। ঘরের ভিতরেও তাই। জানলার পাল্লা পর্যন্ত খুলে পড়ে গিয়েছে। জোড়াঘাটের বাসিন্দা শুভেন্দু মজুমদার জানান, তাঁর স্ত্রী শুক্লাদেবী কানের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু ওই আওয়াজে স্ত্রী কানে হাত দিয়ে বসে পড়েন। তাঁকে ফের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ না হয় দেওয়া যাবে। কিন্তু কেউ চিরতরে বধির হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ কী ভাবে দেওয়া হবে? যে ভাবে শব্দ এবং বায়ুদূষণ হল, তারই বা কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’’

প্রশাসনের চূড়ান্ত অযোগ্যতার জন্যই ওই কাণ্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন শহরের অনেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chinsurah Naihati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy