সচেতনতায়: পরিস্থিতি সামাল দিতে হ্যান্ড-মাইকে প্রচার বিধায়ক অসিত মজুমদারের। ছবি: তাপস ঘোষ
দিন পাঁচেক আগে দলীয় কার্যালয়ে ‘অভিযোগ-বাক্স’ বসিয়েছেন। খুলতেই অভিযোগের বন্যা! দলের নেতাকর্মীদের তোলাবাজি থেকে দুর্নীতি— কী নেই!
সে সব দেখেশুনে শুক্রবার পথে নামলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। প্রথম দফায় এ দিন শুধু শহরের বিভিন্ন অটো-টোটো স্ট্যান্ড থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের তোলাবাজি রুখতে হ্যান্ড-মাইক হাতে দৌড়ে বেড়ালেন তিনি।। চালকদের কেউ কেউ তাঁর কাছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জানালেন, কী ভাবে টাকা চাওয়া হয়। সব শুনে বিধায়কের পরামর্শ, ‘‘কেউ টাকা চাইলে গাড়ি-চালকেরা যেন অভিযোগ করেন।’’
অসিতবাবুর এই ‘অভিযানে’ শোরগোল পড়েছে জেলা সদরে। তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, সামনের বছরে পুরভোট। তারপরে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতেই এই পদক্ষেপ। বিরোধীদের দাবি, এতে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ
মান্যতা পেল।
অসিতবাবু বলেন, ‘‘শহরে এইসব চলছে জানতাম না। মানুষের ক্ষোভ ওই বাক্সে পুঞ্জীভূত হয়েছে। সব ধরনের অভিযোগেই পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অসিতবাবুর পদক্ষেপে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘কেউ যদি টাকা চেয়ে থাকে, ঠিক নয়। বিধায়কের সঙ্গে কথা বলব।’’
এ দিন বিধায়ক প্রথমে যান চুঁচুড়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন টোটো-স্ট্যান্ডে। মাইক নিয়ে বলতে শুরু করেন, চালকদের থেকে অন্যায় ভাবে অর্থনৈতিক উৎকোচ গ্রহণ করা হয়। অনৈতিক ভাবে স্ট্যান্ডে অবৈধ অটো-টোটো ঢোকানো হয়েছে। চালকদের অসুবিধার কথা জানতে চান তিনি। এক টোটো-চালক বলেন, ‘‘আমরা গাড়ি চালাই বা না চালাই, এক তৃণমূল কর্মীকে দৈনিক ২০ টাকা দিতেই হয়। অসুস্থ থাকলেও রেহাই নেই। তৃণমূল নেতারা প্রচারে, মিছিলে ডাকলে যেতেই হয়।’’ আর এক টোটো-চালক বলেন, ‘‘দু’মাস পা ভেঙে বসেছিলাম। কিন্তু ১৪৪০ টাকা গুনতে হয়েছে।’’
সব শুনে বিধায়ক বলেন, ‘‘আর কাউকে টাকা দেবেন না। ভোটে দলের খারাপ ফলে পিছনে এটা অবশ্যই কারণ।’’ বিধায়কের সঙ্গে চুঁচুড়ার পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়, উপ-পুরপ্রধান অমিত রায়-সহ কয়েক জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
লোকসভা ভোটে হুগলিতে বিজপি জিতেছে। চুঁচুড়া বিধানসভায় ভাল ব্যবধানে তৃণমূলকে তারা পিছনে ফেলে দেয়। বিধায়ক জানান, এর পরেই ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য খাদিনা মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে অভিযোগ এবং পরামর্শ বাক্স লাগানো হয়। প্রতিদিন ৩০-৪০টি অভিযোগপত্র জমা পড়ছে। তা থেকেই পরিবহণে অনিয়মের বিষয়ে জানা গিয়েছে।
যদিও তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, পুরসভার এক কাউন্সিলর পরিবহণের ক্ষেত্রে ছড়ি ঘোরাতেন। তাঁর মাথায় দলের তাবড় এক নেতার হাত রয়েছে। বিজেপি জেতার পরে তাঁর রাশ কিছুটা আলগা হয়েছে। গত বুধবার দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে অসিতবাবু বৈঠক করেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দলের ওই নেতার খবরদারি আর মানা হবে না। এর পরেই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
লঞ্চঘাটের পরে এ দিন স্থানীয় পেট্রোল পাম্প, থানার কাছে, খাদিনা মোড়, চুঁচুড়া স্টেশন, হুগলি স্টেশন, ব্যান্ডেলে অটো-স্ট্যান্ডে যান অসিতবাবুরা। এক অটোচালক অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ের বাড়ি করার সময় বাড়তি টাকা দিতে হয়েছিল। সেই সময় তিন দিন তাঁর অটো বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় অটো-চালকেরা জানান, যত্রতত্র প্রচুর টোটো চলায় তাঁদের উপার্জন তলানিতে। টোটোর নির্দিষ্ট রুট বেঁধে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। খারাপ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
বিধায়ক জানান, সমস্যার ব্যাপারে পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কয়েকটি রুটে বিনা পারমিটের অটোর অভিযোগও ওঠে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy