চন্দননগর পুরসভা। ফাইল ছবি
দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে বিড়ম্বনায় পড়লেন চন্দননগরের তৃণমূল নেতারাই!
সোমবার পার্থবাবু দাবি করেছেন, মেয়াদ শেষের আগে রাজ্যে কোনও পুরসভায় প্রশাসক বসানো হয়নি। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, দলীয় কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীকোন্দল সামলাতে না-পেরে ৯ মাস আগে চন্দননগরের পুরবোর্ড ভেঙে সেখানকার কমিশনারকেই কার্যত প্রশাসকের দায়িত্ব দেয় নবান্ন। যে পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি।
স্বভাবতই সংবাদপত্রে পার্থবাবুর মন্তব্য পড়ে চর্চা শুরু হয়েছে গঙ্গাপাড়ের এই শহরে। সরব বিরোধীরাও। তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ আড়ালে বলছেন, ভাল করে জেনে পার্থবাবু বলতে পারতেন। ভেঙে দেওয়া পুরবোর্ডের এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘পার্থবাবুর মতো লোক এমন তথ্য দিলে মুশকিল। মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে আমাদের অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। অবিলম্বে ভোট হওয়া উচিত।’’ প্রসঙ্গ তুলতেই আর এক তৃণমূল নেতার অনুরোধ, ‘‘বিড়ম্বনা বাড়াবেন না।’’
প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের রমেশ তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, ‘‘পার্থবাবুর কথা শুনে রাগ হচ্ছে। এ তো মিথ্যে। গত অগস্টে এখানে পুরবোর্ড ভাঙা হয়েছে, তিনি জানেন না? অগণতান্ত্রিক ভাবে পুরসভা চলছে। অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’’ বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পালও বলেন, ‘‘অসত্যই যে ওদের ভিত্তি, পার্থবাবুর বক্তব্যেই পরিষ্কার। চন্দননগর শিক্ষা-সংস্কৃতির জায়গা। শিক্ষামন্ত্রী অসত্য তথ্য পরিবেশন করে চন্দননগরবাসীকে অপমান করলেন। অবিলম্বে ভোট করা দরকার। চন্দননগরের সাধারণ মানুষ এটাই চান।’’
পার্থবাবুর বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন ভেঙে দেওয়া পুরবোর্ডের মেয়র রাম চক্রবর্তী। তিনি অবশ্য বর্তমানে পুরসভার কাজকর্ম দেখভালের কমিটিতে রয়েছেন। প্রসঙ্গ এড়িয়ে স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘‘যে সব পুরসভায় প্রশাসক রয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে নির্বাচন হবে। চন্দননগরেরও হবে।’’ পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু মন্তব্য করেননি।
শহরবাসীর অনেকেও যথাযথ পুর পরিষেবার জন্য নির্বাচিত পুরবোর্ডের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন। বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা শেখর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কাগজে পার্থবাবুর বক্তব্য দেখে অবাক হয়েছি। পরিষেবার ঘাটতি ঢাকতে দ্রুত নির্বাচন হোক।’’ পাদ্রিপাড়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সূর্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পার্থবাবুর কথা নিয়ে কিছু বলব না। আমরা চাই, নির্বাচন করে স্বচ্ছ পুরবোর্ড গঠন হোক।’’ মানকুণ্ডু কুমড়োবাগানের গৃহবধূ সুমিতা বসুর কথায়, ‘‘মন্ত্রী কী বলেছেন জানি না। তবে পুরবোর্ড না-থাকায় আমাদের ভুগতে হচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যা, জঞ্জাল ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জনপ্রতিনিধির ভূমিকা কতটা বোঝা যাচ্ছে। বাড়ির পাশে কাউন্সিলরের কাছে যাওয়া সহজ। প্রশাসকের নাগাল পাওয়া কঠিন।’’
২০১৫ সালের পুরভোটে চন্দননগরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল। কিন্তু দলের কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব পরিষেবায় পড়ে বলে অভিযোগ। গত বছর অগস্টে রাজ্য সরকার পুরবোর্ড ভেঙে দেয়। ওই মাসের ২৭ তারিখে পুর-কমিশনার স্বপনবাবু পুরসভা চালানোর দায়িত্ব নেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুর-কমিশনারের সঙ্গে আরও পাঁচ জনকে জুড়ে দেয় নবান্ন। ছ’জনের কমিটির চেয়ারম্যান পুর-কমিশনার। বাকিরা হচ্ছেন বিধায়ক ইন্দ্রনীলবাবু, প্রাক্তন মেয়র রামবাবু, প্রাক্তন মেয়র-পারিষদ অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুন্না আগরওয়াল এবং স্নিগ্ধা রায়। ছ’মাসের জন্য এই কমিটির কাজ করার কথা। অর্থাৎ, আগামী অগস্ট পর্যন্ত ভোটের সম্ভাবনা নেই বলে অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy