জলমগ্ন: রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তলিয়ে গিয়েছে ধানজমি। —নিজস্ব চিত্র
এ যেন খাল কেটে প্লাবন আনা! বর্ষাকালে দামোদরের বাড়তি জল নিকাশির জন্য কাটা খাল এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমতা-১ ব্লকের রসপুর এবং বালিচক— এই দুই পঞ্চায়েতের বহু চাষির কাছে। টানা বৃষ্টিতে এ বারও ‘ডি-১’ খাল
উপচে ভাসছে ১০ হাজার বিঘা ধানখেত। ধানগাছগুলির বেশিরভাগ অংশ ডুবে গিয়েছে। আর ফসল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই চাষিদের আশঙ্কা।
ডিভিসি-র ছাড়া জল দামোদর দিয়ে এসে হাওড়ার শ্যামপুরের গড়চুমুকে হগলি নদীতে পড়ে। বর্ষার সময়ে দামোদরে জলের চাপ কমাতে সাতের দশকে সেচ দফতর খালটি কাটে। হুগলিতে দামোদর থেকে বেরিয়ে খালটি এসে পড়েছে আমতার বালিচক পঞ্চায়েতের রামবল্লভপুরের একটি মাঠে। ফলে, অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জল ‘ডি-১’ খাল দিয়ে এসে ওই মাঠেই জমে। কোনও বছর বৃষ্টি কম হলে চাষিদের ততটা সমস্যা হয় না। কিন্তু টানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি জল ছাড়লেই খেত প্লাবিত হয়। এ বছরও তাই হয়েছে।
সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা জানান, আগে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়েছিল। নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পে হাওড়া জেলায় যে কাজ শুরু হয়েছে, তাতে এই সমস্যা দূর করতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা জানান, প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, বাড়তি জল জমি এবং মাঠ দিয়ে গিয়ে দামোদরেই মিশবে। এর জন্য রসপুর পঞ্চায়েতের সোমেশ্বরে কাছে দামোদরের বাঁধে দু’টি স্লুইস গেটও করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সেই পরিকল্পনা কাজ করেনি। দেখা যায়, বর্ষার সময়ে দামোদরে জল বেশি থাকে। ফলে, বালিচক ও রসপুর গ্রামের জমে থাকা জল আর স্লুইস গেট দিয়ে দামোদরে পড়তে পারে না।
গৌতম মণ্ডল নামে রসপুরের এক চাষি বলেন, ‘‘আমি ১৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। এক সপ্তাহ ধরে প্রায় এক কোমর জলের নীচে চলে গিয়েছে সব জমি। ধানগাছের বেশিরভাগ অংশ ডুবে গিয়েছে। জল নামার লক্ষণ নেই। সব ধানগাছ নষ্ট হয়ে যাবে।’’
চাষিদের স্বার্থে ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের চাষজমি থেকে জমা জল বের
করতে পাম্প ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমতার এই এলাকার জমা জল বের করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
চাষিরা মনে করছেন, পাম্প করে জল বের করা যাবে না। বছর কুড়ি আগেও একবার সেই প্রচেষ্টা মাঠে মারা যায়। কারণ, জল ফেলার জায়গাই নেই। রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘এত বিপুল পরিমাণ জল পাম্প করে বের করা আগেও সম্ভব হয়নি। এখনও কাজ হবে কিনা সন্দেহ আছে।’’
রসপুর পঞ্চায়েতে মান্দারিয়া খালও আছে। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় খালটি সংস্কার হচ্ছে। এই খালটিও দামোদরে পড়েছে। জয়ন্তবাবু
বলেন, ‘‘চাষিদের পাকাপাকি ভাবে বাঁচানোর উপায় হল, ডি-১ খালকে দু’টি ভাগে সম্প্রসারণ করা। নতুন খাল কেটে একটি অংশ জুড়তে হবে দামোদরের সঙ্গে, অন্য অংশ মান্দারিয়া খালের সঙ্গে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy