Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

নবান্নের কাছেই দুষ্কৃতীদের আখড়া, নেশার প্রতিবাদ করে প্রহৃত প্রাক্তন বক্সার 

গত রবিবার রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন নবান্নের সামনেই শিবপুরের দক্ষিণপাড়ায় এই ঘটনাটি ঘটে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

রাত ১০টা নাগাদ বাড়ির সামনের রাস্তায় টোটোয় বসে নেশা করছিল স্থানীয় এক দুষ্কৃতী-সহ তিন যুবক। সেই সঙ্গে চলছিল নিজেদের মধ্যে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। রাতে বাড়ির লোহার সদর দরজা বন্ধ করার সময়ে তা দেখে চুপ থাকতে পারেননি গৃহকর্তা। প্রতিবাদ করেন। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকে। এর পর যা ঘটে, তা সিনেমার দৃশ্য বলা যায়।

গত রবিবার রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন নবান্নের সামনেই শিবপুরের দক্ষিণপাড়ায় এই ঘটনাটি ঘটে। প্রকাশ্যে বসে নেশা করার প্রতিবাদ করে প্রহৃত হন প্রাক্তন বক্সিং চ্যাম্পিয়ন অমিতকুমার সামন্ত এবং তাঁর পরিবার। অমিতবাবুর দাবি, যারা তাঁকে আক্রমণ করে তারা এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী। অথচ তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। মূল অভিযুক্ত মহম্মদ ভিকি এবং তার দল ঘটনার তিন দিন পরেও প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সামন্ত পরিবার-সহ গোটা পাড়া।

বেসুর প্রাক্তনী, পেশায় সরকারি ঠিকাদার বছর পঁয়ষট্টির গৃহকর্তাকে একা পেয়ে তাঁর সোনার হার ছিনিয়ে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুষ্কৃতী ও তার সঙ্গীরা। কিন্তু একাধিক বার রাজ্যের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হওয়া ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে ওঠেনি দুষ্কৃতীরা। তত ক্ষণে চিৎকার শুনে নীচে নেমে এসেছিলেন বৃদ্ধের ছেলে ও আশপাশের বাসিন্দারা। বাবাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছেলে। লোকজন দেখে রণে ভঙ্গ দিয়ে সেই সময়ের মতো চলে যায় তারা। কিছু ক্ষণ পরে আরও ১৫-২০ জন দুষ্কৃতী নিয়ে দ্বিতীয় বার আক্রমণ করে তারা। মত্ত অবস্থায় ভাঙা কাঁচের বোতল প্রৌঢ়ের ছেলের পেটে ঢোকাতে যায় এক দুষ্কৃতী। ছেলেকে বাঁচাতে নিজের লাইসেন্সড রিভলভার থেকে শূন্যে গুলি ছোড়েন প্রাক্তন বক্সার। ভয় পেয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। তত ক্ষণে একাধিক বার পুলিশের ১০০ ডায়ালে ফোন করা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন বক্সার। কিন্তু ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে পুলিশ আসে এক ঘণ্টা পরে।

অমিতবাবু বুধবার সকালে বাড়িতে বসে বলেন, ‘‘এখানে বাড়ি করে ২১ বছর ধরে থাকছি। গত দু’বছর ধরে এলাকায় দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত দেখে রীতিমতো আতঙ্কে আছি আমরা।’’ তিনতলা বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে-বৌমা আর নাতনিকে নিয়ে বাস করেন তিনি। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছেলে অরিন্দম সামন্ত জানান, গত দু’বছর ধরে এলাকায় দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রাত বাড়লেই দোকানদার, পথচলতি মানুষ এমনকি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা চায় ওরা। না দিলে বা প্রতিবাদ করলে খুন, ধর্ষণের হুমকি দিয়ে যায়। এলাকায় একটি গুমটি রয়েছে প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তির। দাবি মতো তিনি টাকা না দেওয়ায় গুমটিটাই উপড়ে দিয়েছে ওরা। কিছু প্রতিবাদ করলে বলে, আমাদের পুলিশ কিছু বলবে না।

অভিযোগ, এলাকায় এদের হুমকির মুখে পড়ে কার্যত কোণঠাসা ভবানী ভবনে কর্মরত এক পুলিশকর্মীও। বৃদ্ধা মা-সহ গোটা পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। তিনি জানান, সন্ধ্যা হলেই পাড়ায় নেশার আসর বসার প্রতিবাদ করতেন তিনি। সেই কারণে চলতি মাসের ৩ তারিখ তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে প্রায় ১৫-২০ জনের দুষ্কৃতী কাঁচের বোতল ও ইট ছোড়ে। তিনি বলেন, ‘‘ওই রাতে দুই দুষ্কৃতী আমাকে গালিগালাজ করে। এমনকি খুনের হুমকিও দিয়ে যায়।’’

গোটা বিষয়টি শোনার পরে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা অমিতবাবু এবং তাঁর ছেলেকে অফিসে ডেকে পাঠান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ শোনার পরে ওঁদের নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা করছি। দুষ্কৃতীদের দলকে ধরা হবে। কেউ রেহাই পাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Police Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy