Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
birds

মাছ বাঁচাতে জলাশয়ে জাল, প্রাণ যাচ্ছে পাখির

মাছ রক্ষার জন্য ফুলেশ্বর স্টেশনের ডাউন প্লাটফর্মের পাশের ঝিলে বিছানো হয়েছিল নাইলনের সরু সুতোর জাল। সেই জালে আটকে প্রাণ গিয়েছে বহু মাছরাঙা, ব্রোঞ্জ উইং জাকানা, নাইট হেরন, ডাহুক, পানকৌড়ির। অভিযোগ, দিনের পরে দিন এই ঘটনা ঘটেছে।

মৃত্যুফাঁদ: জালে আটকে প্রাণ গেল ব্রোঞ্জ উইং জাকানার। —নিজস্ব চিত্র

মৃত্যুফাঁদ: জালে আটকে প্রাণ গেল ব্রোঞ্জ উইং জাকানার। —নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ০৩:২৬
Share: Save:

জালে আটকে পড়া পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে বাঁচার জন্য। তাকে উদ্ধারে মরিয়া সঙ্গীরা ঠোঁটের ফলায় ফালাফালা করার চেষ্টা করছে সেই জাল। এই দৃশ্য দেখে পুলিশে ফোন করেছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু পুলিশ এসে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় পাখিটির।
মাছ রক্ষার জন্য ফুলেশ্বর স্টেশনের ডাউন প্লাটফর্মের পাশের ঝিলে বিছানো হয়েছিল নাইলনের সরু সুতোর জাল। সেই জালে আটকে প্রাণ গিয়েছে বহু মাছরাঙা, ব্রোঞ্জ উইং জাকানা, নাইট হেরন, ডাহুক, পানকৌড়ির। অভিযোগ, দিনের পরে দিন এই ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার স্থানীয় এক বাসিন্দার ফোন পেয়ে উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ সেই জালটি সরিয়ে দেয়। যদিও অভিযোগ, এলাকার অনেক জলাশয়েই এখনও জাল বিছানো রয়েছে।

যে ঝিল থেকে জাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেখানে মাছ চাষ করেন স্থানীয় কিছু মানুষ। ঝিলের আশেপাশে ঘুরে বেডায় অজস্র ব্রোঞ্জ উইং জাকানা, নাইট হেরন, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা, ডাহুক ও পানকৌড়ি। এদের খাবার জলাশয়ের ছোট মাছ ও পোকামাকড়। জলাশয়ের কচুরিপানায় বাসা বাঁধে তারা।

তাদের থেকে মাছ রক্ষা করতেই ঝিলের উপরে জাল বিছানো হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে অজয় দাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দেখেন, একটি ব্রোঞ্জ ইউংয়ের ডানা আটকে গিয়েছে ডালে। নিজেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে। জাল ছিঁড়ে পাখিটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে তার সঙ্গীরা।

অজয়বাবুর কথায়, ‘‘দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ছুটে গিয়েছিলাম ঝিলের পাড়ে। আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঝিলে নেমে পাখিটিকে মুক্ত করতে পারেনি। বন দফতরে ফোন করেছিলাম। বন দফতর থেকে জানানো হয় লকডাউন চলছে। যাওয়া যাবে না। পরে উলুবেড়িয়া থানায় ফোন করি। দ্রুত সেখানে আসে পুলিশ। কিন্তু উদ্ধার করার আগেই পাখিটির মৃত্যু হয়েছিল।’’
কী বলছে বন দফতর?

উলুবেড়িয়া বন দফতরের রেঞ্জ আধিকারিক সুকুমার সরকারের দাবি, তিনি কোনও ফোন পাননি। উলুবেড়িয়া থানার আইসি কৌশিক কুণ্ডু বলেন, ‘‘খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু পাখিটিকে বাঁচানো যায়নি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওই ঝিলের জাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যাঁরা জাল পেতেছিলেন, তাঁদের খোঁজ চলছে। ফের এমন ঘটনা ঘটলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ওই পদক্ষেপে খুশি এলাকাবাসীর একাংশ। অজয়বাবু বলেন, ‘‘এই দৃশ্য হামেশাই দেখতে পাওয়া যেত। জালে আটকে প্রাণ যেত অনেক পাখির।’’ অভিযোগ, এলাকার আরও অনেক জলাশয়ে এখনও জাল বিছানো রয়েছে। বন দফতর জানিয়েছে, খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘ঘুড়ির সুতোয় আটকে পাখির মৃত্যু হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু জলাশয়ের জালে আটকে পাখির মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে বার বার প্রচার চালায় বন দফতর। খুব শীঘ্রই আমরা ওই এলাকায় যাব। অন্য কোনও জলাশয়ে জাল বিছানো থাকলে তা সরিয়ে নেওয়া হবে।’’ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক কৌশিক প্রামাণিকের আশঙ্কা, ‘‘যে ভাবে এক শ্রেণির মানুষ পরিবেশ নষ্ট করছে, তাতে আগামী দিনে ওই সব পাখি আর দেখা যাবে না। প্রশাসনের উচিত, আইন করে এই সব কাজ বন্ধ করা। তবেই জীব-জন্তু এবং পরিবেশ বাঁচবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Birds Net
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy