‘ওয়ার্ক টু রুল’— এই নীতির বাইরে আর যাওয়া যাবে না। হাওড়া গ্রামীণ জেলায় এমনই নিদান দিয়েছেন এক বিডিও। তাঁর মুখে সেই কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছেন ব্লকের তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, এর আগেও নিয়ম মানার কথা বলতেন বিডিও। কিন্তু সেটা দেখার দায়িত্ব ছেড়ে দিতেন পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তাদের উপরেই। এ বারে তিনি মূলত সরকারি কর্মচারীদের কাজের নিয়ম কঠোরভাবে মানার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৩ জুনের ওই বৈঠকে ১০০দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে বিডিও এই নির্দেশ দেন। ব্লকের অধীন প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। এছাড়াও হাজির ছিলেন একশো দিনের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মচারীরা। তবে বিডিও-র যাবতীয় বক্তব্যের লক্ষ্য ছিলেন সরকারি কর্মচারীরা।
কী কী নির্দেশ?
প্রথমত, মাটি কাটার কাজে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। প্রকল্পে যত ফুট মাটি কাটার কথা বলা আছে, সেই পরিমাণ মাটি কাটা হচ্ছে কি না তা ফিতে ফেলে দেখে নিতে হবে নির্মাণ সহায়কদের। তা হিসাব খাতায় তুলতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আগে কাজের তত্ত্ববধানের দায়িত্ব ছিল সুপারভাইজারদের উপরে। সাধারণত, তাঁদের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই নিয়োগ করা হয়। এর জন্য তাঁরা একজন দক্ষ শ্রমিকের মজুরি পেয়ে থাকেন। এ বারও কাজের তত্ত্বাবধান তিনিই করবেন। তবে তাঁর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একজন সরকারি কর্মচারীকে। কোনও গাফিলতি হলে তার দায় সেই সরকারি কর্মচারীর উপরে পড়বে বলে সতর্কও করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, প্রতিদিন যত জবকার্ডধারী কাজ করবেন তাঁদের নাম হাজিরা খাতায় তুলতে হবে। এতদিন সেই নিয়ম থাকলেও বাস্তব ছবিটা ছিল অন্য রকম। যদি কোনও জবকার্ডধারী না আসতেন তাঁর বদলে অন্য একজন কাজ করতেন। আসল জবকার্ডধারীর নামে মজুরি জমা পড়ত। এবারে আর সেটা চলবে না। বিডিও সাফ জানিয়েছেন, যদি কোনও জবকার্ডধারী কাজে না আসেন তাহলে সেই দিনের হাজিরা খাতায় তাঁর নামের পাশে অনুপস্থিত লিখতে হবে।
চতুর্থত, কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আগেও কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল। কিন্তু বাস্তবে, কাজে হাজিরা দিয়ে ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যেতেন জবকার্ডধারীরা। এ বার বিডিও কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা কঠোরভাবে মানার কথা বলেছেন। তার মধ্যে এক ঘন্টা বিশ্রামের সুযোগ পাবেন মজুরেরা। কিন্তু বাকি সাত ঘন্টা কাজ করতেই হবে।
পঞ্চমত, যদি শিশুসন্তানকে নিয়ে তার মা কাজ করতে আসেন তা হলে শিশুসন্তানের দেখভালের দায়িত্ব অন্য একজন জবকার্ডধারী মহিলাকে দিতে হবে। তার জন্য তিনি অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি পাবেন। এই নিয়ম আগেও ছিল। অভিযোগ, শিশু নিয়ে মায়েরা কাজেই আসতেন না। তাঁদের হাজিরা উঠে যেত।
গ্রামাঞ্চলে যে সব প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ বেশি করে উঠেছে তার মধ্যে প্রধান হল একশো দিনের কাজ। মাটি কাটা থেকে শুরু করে জবকার্ডধারীদের কাজ দেওয়া সবেতে ভুয়ো হিসাব পেশ করার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। হঠাৎ এই প্রকল্পে কাজ করানোর ক্ষেত্রে এতটা কঠোর হচ্ছেন কেন? এ বিষয়ে ওই বিডিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এটা হল পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফল। জেলায় লোকসভার দুটি আসনেই জিতেছে তৃণমূল। উলুবেড়িয়া লোকসভার অধীন সাতটি বিধানসভাতেই লিড পেয়েছে তৃণমূল। তবুও বহু পঞ্চায়েতে বিজেপির কাছে তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে। যেগুলিতে তারা জিতেছে সেখানে ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। এই অবস্থায় শাসক দল যে আর ভালে অবস্থায় নেই তা বুঝে গিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে তাঁদের এই কড়াকড়ি তারই বহিঃপ্রকাশ। পঞ্চায়েত সমিতির এই কর্তাদের আশঙ্কা, পরিবর্তনের এই আবহে পঞ্চায়েত বা সমিতিতে বসে সরকারি প্রকল্পে যথেচ্ছাচার করার দিন ফুরনোর পথে।
শুধু এই ব্লকেই নয়, ২৭ মে নির্বাচনী বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর থেকে জেলা বা ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামগ্রিকভাবে উন্নয়নমূলক কাজ সংক্রান্ত কোনও সার্বিক বৈঠক এখনও ডাকা হয়নি। একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা বিডিওদের যত দ্রুত সম্ভব উন্নয়নমূলক কাজ সংক্রান্ত বৈঠক ডাকার জন্য অনুরোধ করছেন। কিন্তু সেই বৈঠক ডাকা হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নমূলক কাথমকে আছে। এইসব পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের অনুমান, প্রশাসন যে আর তাঁদের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না তা বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনাতেই প্রমাণ।
যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েকদিনের মধ্যে জেলা স্তরে বৈঠক ডেকে কাজের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হবে। তারপরে পর্যায়ক্রমে ব্লক স্তরের বৈঠকগুলি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy