Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই, পথে নামলেন দুই আক্রান্ত

বছর একান্নর নীলাদ্রিবাবু বলেন, ‘‘নিজে মুখের ক্যানসারে একসময়ে ভুগেছি। খুব গুটখা, বিড়ি, সিগারেট খেতাম। অস্ত্রোপচার করে বাম চোয়াল বাদ দিতে হয়েছে। এখন সুস্থ আছি। তাই সবাইকে বলি, বিড়ি, সিগারেট, গুটখার নেশায় না-পড়তে।’’

প্রচার: উলুবেড়িয়ার নিমদিঘির এক দোকানে নীলাদ্রি ও জগন। —নিজস্ব িচত্র

প্রচার: উলুবেড়িয়ার নিমদিঘির এক দোকানে নীলাদ্রি ও জগন। —নিজস্ব িচত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৫৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে হেরেও তিনি ‘লড়াই’ থেকে সরেননি। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ বার উলুবেড়িয়া বাহিরতফার বাসিন্দা নীলাদ্রি চক্রবর্তী পাশে পেয়ে গিয়েছেন আর এক ক্যানসার আক্রান্ত জগন সাউকে। তাঁর বাড়ি পাশের যদুরবেড়িয়া গ্রামে। দু’জনে মিলে শুক্রবার ‘বিশ্ব তামাক বর্জন দিবসে’ হাতে পোস্টার নিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধের আবেদন জানালেন।

বছর একান্নর নীলাদ্রিবাবু বলেন, ‘‘নিজে মুখের ক্যানসারে একসময়ে ভুগেছি। খুব গুটখা, বিড়ি, সিগারেট খেতাম। অস্ত্রোপচার করে বাম চোয়াল বাদ দিতে হয়েছে। এখন সুস্থ আছি। তাই সবাইকে বলি, বিড়ি, সিগারেট, গুটখার নেশায় না-পড়তে।’’ বছর ছেচল্লিশের জগনবাবু মাসছয়েক আগে মুখের ক্যনসারেই আক্রান্ত হন। ছ’মাসের এক পুত্রসন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। গাড়ি-চালকের কাজ করে কী ভাবে রোগের চিকিৎসা করাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না জগনবাবু। তবু এ দিন নীলাদ্রিবাবুর ডাকে সাড়া দিতে দ্বিধা করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কী হবে জানি না। বিড়ি-সিগারেট খাওয়া বন্ধ করার জন্য একসময়ে বহু মানুষ বারণ করেছেন। শুনিনি। আজ তার ফল ভুগছি। তাই মানুষকে সচেতন করতে পথে নেমেছি।’’

উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সভাপতি নীলাদ্রিবাবু আগে থাকতেন বাণীবনের উত্তর পিরপুর গ্রামে। গত বছর উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির ২৩ নম্বর আসনে দলের টিকিটে লড়ে হেরেছিলেন তিনি। প্রচারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যানসার নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন। তামাক বা বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার কুফলের কথা বুঝিয়েছেন। প্রচারের দেওয়ালও ভরিয়ে তুলেছিলেন সতর্কবার্তায়। পাশে পেয়েছিলেন স্ত্রী মন্দিরাকে। তিনিও জেলা পরিষদের ১৪ নম্বর আসনে কংগ্রেসের টিকিটেই লড়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই প্রচার ভোট-বাক্সে ছাপ ফেলেনি। তবু দমে যাওয়ার মানুষ নন নীলাদ্রিবাবু। নতুন বাড়ি করে বাহিরতফায় চলে এসেছেন। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি।

পেশায় ব্যবসায়ী নীলাদ্রিবাবু পাঁচ বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। স্বামীর মুখের ক্যানসারের কথা জানতে পেরে সেই সময়ে ভেঙে পড়েছিলেন মন্দিরা। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিনের কথা আজও মনে পড়ে। মেয়ে তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ওর অসুখে কথা জেনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। পরিবারের সর্বস্ব দিয়ে স্বামীকে সুস্থ করেছি। তাই যুবকদের কাছে অনুরোধ, গুটখা-সিগারেট-বিড়ি ত্যাগ করুন।’’ নীলাদ্রিবাবুর মেয়ে নীলাক্ষী দশম শ্রেণির ছাত্রী। সে-ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধে সরব হয়েছে। তার কথায়, ‘‘সরকার ব্যবস্থা নিক। চারদিকে কত তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন! তাতেই যুব সমাজ বেশি করে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মৃত্যুও ঘটছে।’’ জগনবাবুর স্ত্রী মৌসুমি বলেন, ‘‘স্বামীর অসুখের কথা শুনে ভয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছি । কী ভাবে চিকিৎসা করাব ভাবতে পারছি না।’’

মুখে ‘মাস্ক’ লাগিয়ে এ দিন প্রচারে বেরিয়ে সাড়া মিলেছে বলে দাবি করেছেন দুই আক্রান্তই। উলুবেড়িয়ার দোকানি শেখ ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘‘ওঁদের কথা "ঠিকই। তামাকজাত দ্রব্য ক্ষতি করে সেটা সকলেই জানেন। তবুও খদ্দেরের চাপে ও ব্যবসা চালানোর জন্য বিক্রি করতে হয়। সরকার যদি এই সবের কারখানা বন্ধ করে দেয় তা হলে এমনিতেই বিক্রি বন্ধ হবে।’’

একই বক্তব্য নাট্যকার অনুপ চক্রবর্তীরও। তিনিও ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসার পরে সুস্থ হন।

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Smoking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy