স্তব্ধ: সুনসান খানাকুল-১ ব্লকের রামমোহন ১ পঞ্চায়েত। নিজস্ব চিত্র
এ যেন একেবারে উলটপুরাণ!
বিজেপির ছেলেরা ‘সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার’ করতে পঞ্চায়েতে আসছেন—এই খবর পেয়ে সেই যে বাড়ি ফিরেছেন, আর পঞ্চায়েতমুখো হননি খানাকুল-১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত রামমোহন-১ পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় দলুই। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনুপস্থিত পঞ্চায়েতের অন্য সদস্যরাও। আর সেই অনুপস্থিতির জেরে ব্যাহত হচ্ছে পঞ্চায়েতের কাজ।
পঞ্চায়েতের এই অচলাবস্থা শুধু রামমোহন-১ পঞ্চায়েতেই নয়। মহকুমার ৬টি ব্লকের ৬৩ পঞ্চায়েতের অধিকাংশেই রাজনৈতিক অশান্তির কোপ পড়েছে। খানাকুলের দুটি ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েতে প্রধানরা অনুপস্থিত থাকছেন। বাকিগুলোতে প্রধানদের উপস্থিতি নামমাত্র। একই অবস্থা আরামবাগের ১৫ টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বাতানল, আরান্ডি ১ ও ২ পঞ্চায়েতে প্রধানদেরও। গোঘাট-১ ব্লকের রঘুবাটি পঞ্চায়েত প্রধান সুষমা সাঁতরা অবশ্য বলেন, “আমাকে অসুবিধায় পড়তে হয়নি। পঞ্চায়েতের সাধারণ সভাও নির্বিঘ্নে হল। এ বার চতুর্দশ অর্থ কমিশনের প্রাপ্ত তহবিলে গ্রাম উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। বাকি অন্য প্রকল্পগুলিও শুরু করব।”
আরামবাগ মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েতের সব কটাই তৃণমূলের দখলে। একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা। অথচ সেখানেই শাসকের এমন তটস্থ অবস্থায় অবাক স্থানীয় বাসিন্দারাও। খানাকুলের রামমোহন-১ পঞ্চায়েতের পশ্চিম রাধানগর গ্রামের শ্যামল ভৌমিক, বাতানলের চকহাজি গ্রামের বাদশা আলম প্রমুখর অভিযোগ, “গ্রামের মানুষকে পরিষেবা এবং ভাল রাখার দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। শংসাপত্র পাওয়া ছাড়া কোন পরিষেবা মিলছে না। খুব সমস্যায় পড়েছি আমরা।’’ সমস্যার কথা স্বীকার করে কামারপুকুরের পঞ্চায়েত প্রধান তপন মণ্ডল বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের পাঠিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমার পঞ্চায়েতেও ওরা সৌজন্য সাক্ষাৎকার করতে আসবে শুনেছি। এ রকম আতঙ্কের পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা কঠিন।”
বাম জমানায় ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট পরবর্তী একই রকম পরিস্থিতি হয়েছিল আরামবাগে। সে সময় বামেরা রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও লোকসভা ভোটে তৃণমূল রাজ্যে ১৯টা আসন পায়। সিপিএমের আসন ছিল ১৫টা। বিজেপি পেয়েছিল ১টা আসন। সে সময় মহকুমার সবক’টি পঞ্চায়েতেই মারধর, তালা মারা এবং ঘেরাওয়ের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। প্রধানরা প্রায় টানা চার মাস পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারেননি।
লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার চারদিনের মাথায় পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েছিলেন রামমোহন-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় দলুই। তাঁর অভিযোগ, “ফল ঘোষণার দিন বিকাল থেকেই বিজেপির অনুপ সিংহ, অশোক ঘোড়ুই, সুকুমার মালিকরা হুমকি দিচ্ছিল। তারপর থেকেই আর পঞ্চায়েতে যাইনি।’’ গত শুক্রবার মহিলা সদস্য রমা দলুই স্বামী অমরেন্দ্রনাথ দলুইকে নিয়ে পঞ্চায়েত গিয়েছিলেন। সেই সময় অমরেন্দ্রনাথকে চড় মারা হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির অনুপ সিংহ, অশোক ঘোড়ুইদের অবশ্য দাবি, “মারধর বা হুমকির অভিযোগ মিথ্যা। আমরা পঞ্চায়েতের কাজে সহযোগিতা করতে চেয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকার করতে চেয়েছি। কিন্তু প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়নি।’’
দলের বিরুদ্ধে ওঠা এই সন্ত্রাস নিয়ে বিজেপি আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “আমরা আক্ষরিক অর্থেই পঞ্চায়েত কাজে সহযোগিতা করতে চেয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকার করতে চেয়ছি। কিন্তু প্রধানরা এমনই দুর্নীতি করেছেন যে আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে ভেবে ভয়ে পঞ্চায়েতমুখী হতে পারছেন না।”
মহকুমার বিডিওরা অবশ্য জানিয়েছেন, “প্রধানরা যে অফিস যেতে পারছেন না তা নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy