ভাঙন: বেআইনি নির্মাণের ফলে পাড় ভাঙছে গঙ্গার। দীপঙ্কর দে।
বালি থেকে কল্যাণী পর্যন্ত এলাকায় গঙ্গার দু’পাড়ে বহু বেআইনি নির্মাণ হয়েছে গত দশ বছরে। এর জেরে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে, বিশেষত উত্তরপাড়া, কোন্নগর ও চন্দননগরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অথচ কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন দফতর বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাল।
গত এক দশকে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে লাগামহীনভাবে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। কোথাও হোটেল, কোথাও আবাসন আবার কোথাও শপিং-মল গড়ে উঠেছে। উত্তরপাড়ার দোলতলায় হোটেল তৈরি হয়েছে গঙ্গার গা-ঘেঁষে। এক সময় উত্তরপাড়ার গঙ্গার পাড়ে বহু ইটভাটা ছিল। এখন ইটভাটার জমিতেই বিভিন্ন সংস্থা শপিং-মল এবং আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলছে। একইভাবে কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বর, চুঁচুড়া, চন্দননগর-সহ সব পুর এলাকাতেই গঙ্গার পাড়ে বেআইনি নির্মাণ গড়ে উঠেছে লাগামহীনভাবে। চন্দননগরের ১১, ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গঙ্গার পাড় দখল করে বেআইনি বসতি গড়ে উঠেছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
পোর্ট ট্রাস্টের বিধি অনুয়ায়ী, গঙ্গার দু’পারে যেখানে জোয়ার-ভাটা খেলে, সেখান থেকে ৪৭ মিটার অর্থাৎ ১২৫ ফুটের মধ্যে কোনও নির্মাণ করা যাবে না। পোর্ট ট্রাস্টের তরফে রাজ্যের প্রতিটি পুরসভাকে এই বিধি কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া আছে। অভিযোগ, পোর্ট ট্রাস্ট, পুর ও নগর উন্নয়ন দফতর বা সংশ্লিষ্ট পুরসভা কর্তৃপক্ষের তরফে নজরদারি করা হয় না। ফলে শুধু বেআইনি নির্মাণ নয়, গঙ্গা থেকে সাদা বালিও তোলা হচ্ছে নিয়ম ভেঙে। এর জেরে গঙ্গার দু’পাড়ে মাটির চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে ভাঙন। উত্তরপাড়ার কোতরং, চন্দননগরের হাটখোলা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বছর তিনেক আগে চন্দননগরে একটি বহুতল আবাসন গঙ্গার ধসে পড়ে। প্রশাসনের তরফে আবাসনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
ভাঙনের কারণ
• গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে গড়ে উঠেছে হোটেল, আবাসন, শপিং-মল।
• উত্তরপাড়ার দোলতলায় হোটেল তৈরি হয়েছে গঙ্গার গা-ঘেঁষে।
•গঙ্গার পাড় দখল করে তৈরি হয়েছে বেআইনি বসতি।
বেআইনিভাবে সাদা বালি তোলায় মাটির চরিত্র নষ্ট হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই চন্দনননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমির তরফে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, (১) সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলির তরফে বালি থেকে কল্যাণী পর্যন্ত কতগুলি বেআইনি নির্মাণ হয়েছে—তা সমীক্ষা করে দেখা হোক। (২) সমীক্ষায় পাওয়া বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। (৩) বেআইনি নির্মাণ রুখতে পোর্ট ট্রাস্ট গঙ্গার দু’পাড়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা তৈরি করে দিক।চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমির কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নানা অনিয়মের ফলেই গঙ্গায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। বেআইনিভাবে গঙ্গা থেকে বালি তোলায় কল্যাণীর ঈশ্বরগুপ্ত সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনই গঙ্গার দু’ধারে বেআইনি নির্মাণ ও বালি তোলা বন্ধ করা প্রয়োজন। না হলে গঙ্গার দু’পাড় আগামী দিনে আরও বড় ভাঙনের কবলে পড়বে।’’
ব্যারাকপুরে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে গঙ্গার উপর একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। চন্দননগর পুরসভার কমিশনার স্বপন কুন্ডু বলেন, ‘‘বিধি ভেঙে গঙ্গার পাড়ে নির্মাণের বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরেও জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy