Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বিভাজন চাই না

নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় হুগলির শ্রীরামপুরে মিছিল করেন নাগরিকরা। ছেলের ছবি নিয়ে সেই পথেই সামিল হয়েছিলেন ওই যুবক।

তোলো আওয়াজ: : নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে শ্রীরামপুরে নাগরিক মিছিল। নিজস্ব চিত্র

তোলো আওয়াজ: : নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে শ্রীরামপুরে নাগরিক মিছিল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

লালনের বয়স কয়েক মাস। ফুটফুটে একরত্তির ছবি দেওয়া প্ল্যাকার্ড গলায় ঝোলানো তার বাবার। প্ল্যাকার্ডের বার্তা বলছে, ‘আমার ছেলের নাম লালন। তার এবং সব শিশুদের জন্য ভবিষ্যতের ভারত হোক ধর্মীয় ভেদাভেদহীন। রাজনীতিতে ধর্ম মেশাবেন না।’’

নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় হুগলির শ্রীরামপুরে মিছিল করেন নাগরিকরা। ছেলের ছবি নিয়ে সেই পথেই সামিল হয়েছিলেন ওই যুবক। তাঁর সুরেই তরুণী থেকে অশীতিপর— গর্জে উঠলেন সবাই। একবাক্যে সেই জমায়েত জানিয়ে দিল, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের ‘অপচেষ্টা’ রুখতে হাতে হাত ধরেই সবাই পা মেলাবেন।

নাগরিক পঞ্জী, নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে এ দিন ওই মিছিলের ডাক দিয়েছিল শ্রীরামপুর নাগরিক উদ্যোগ। স্টেশন সংলগ্ন গাঁধী ময়দানের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। হিুন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ তাতে সামিল হন। সেই ভিড়ে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ব্যবসায়ী, গৃহবধূ কে ছিলেন না! কখনও স্লোগান বলল— ‘তোমার বর্ডার, তোমার কাঁটাতার / এই বিশ্ব জনতার’। কখনও আওয়াজ উঠল— ‘আমার দেশ লালনের দেশ, রবীন্দ্রনাথের দেশ / সাম্প্রদায়িকতার রাখব না লেশ’। সমবেত কণ্ঠে কখনও শোনা গেল— ‘এনআরসি-সে আজাদি / সিএএ-সে আজাদি / দেশ মাঙ্গে আজাদি’। মিছিলকারীদের হাতে ছিল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড। নয়া নাগরিকত্ব আইনের ‘বিপদ’ নিয়ে লিফলেট বিলি করেন তাঁরা।

শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে মিছিল শেষ হয় বিপি দে স্ট্রিট এবং কেএম শা স্ট্রিটের সংযোগস্থলে। সেখানে সভা হয়। দিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন ভাঙতে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেন বক্তারা। অভিযোগ ওঠে, দেশে বেকার সমস্যা বাড়ছে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে, বেসরকারিকরণ হচ্ছে একের পর এক রাষ্ট্রীয় সংস্থার। আর্থিক মন্দা চলছে। এই পরিস্থিতি থেকে সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতে ধর্মীয় বিভাজনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। বক্তব্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চলে প্রতিবাদ।

কর্মসূচির উদ্যোক্তারা জানান, বিভিন্ন সময়েই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে এই শহর পথে নেমেছে। এনআরসি-র প্রতিবাদেও তাঁরা গোড়া থেকেই সরব। এনআরসি বিরোধী যুক্তমঞ্চের তরফে চলতি মাসেই পাহাড় থেকে সাগর পর্যন্ত যাত্রা হয়। হুগলি জেলার উপর দিয়ে ওই আন্দোলন যাত্রা যায়। তাতে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধিত করা হয় শ্রীরামপুরের নাগরিক সংগঠনটির তরফে। এখানে পথসভাও হয় সেই সময়। উদ্যোক্তাদের তরফে গৌতম সরকার, সুদীপ বসু প্রমুখ বলেন, ‘‘যতদিন পর্যন্ত নয়া সংশোধনী আইনের মোড়কে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের চেষ্টা না থামছে, তত দিন ধারাবাহিক ভাবে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NRC CAA Anti CAA protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy