Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
আর কোনও পৌলোমী হাত খোয়াবে না তো?
Chandannagar

ভোটের আগে বোমা বানানো ঠেকাতে আর্জি

কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে চন্দননগরের একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা।

ক্ষতি: হাত হারানোর পর পৌলোমী (নীচে) ফাইল ছবি। নিজস্ব চিত্র

ক্ষতি: হাত হারানোর পর পৌলোমী (নীচে) ফাইল ছবি। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

শিয়রে পুরভোট। প্রচার পর্বের শুরু থেকে আবার কি বোমাবাজিতে ত্রস্ত হবে এলাকার পর এলাকা? আবার কোনও পৌলোমী হালদারকে হাত খোয়াতে হবে না তো?

প্রশ্নগুলো উঠছে। তাই বোমাকে কেন্দ্র করে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে উৎপাদন বন্ধই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। সে কারণে কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে চন্দননগরের একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা।

দু’বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার পৌলোমী হালদারের হাত উড়ে যাওয়ার ঘটনা এখনও অনেকের স্মৃতিতে টাটকা। ফুল তুলতে গিয়ে খেলার জিনিস মনে করে বোমা কুড়িয়ে এনেছিল বছর সাতেকের মেয়েটা। বোমায় উড়ে গিয়েছিল তার বাঁ হাত। একাধিক অস্ত্রোপচারের পরে তার জীবন বাঁচে। কিন্তু কব্জির উপর থেকে সেই হাত বাদ দিতে হয়। সুস্থ হওয়ার পরে ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘হাতটা ফিরিয়ে দাও ঠাকুর।’’ ছোট্ট মেয়েটি নতুন একটি হাত কিনে দেওয়ার আর্তিও জানিয়েছিল বাবা-মায়ের কাছে।

এই ঘটনায় অনেকেই শিউরে উঠেছিলেন। তখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়। এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে ওঠে। কাদের রাখা বোমায় ওই ঘটনা, তা নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল দু’পক্ষ। প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুমদাম করে বোমা ফাটানো বঙ্গ-রাজনীতির এক চেনা ছবি। অবশ্য শুধু নির্বাচনই নয়, বছরের অন্য সময়েও রাজনৈতিক গোলমালে আকছার বোমার ব্যবহার চলে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও রাজনীতির কারবারিদের একাংশের তা কানে ঢোকে না বলে অভিযোগ। তার ফলেই রাজনীতির বাজারে আনাগোনা বাড়ে তাজা বোমার।

‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ নামে ওই সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, রাজ্য জুড়ে বহু বেআইনি বাজি কারখানা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই সব কারখানাতেই তৈরি হয় প্রাণঘাতী বোমা। কমিশনের কাছে পাঠানো চিঠিতে আর্জি জানানো হয়েছে, রাজ্য জুড়ে বেআইনি সমস্ত বেআইনি বাজি কারখান‌া চিহ্নিত করতে পুলিশ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হোক। সেই সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হোক। তা হলে বোমা তৈরিতে রাশ টানা যাবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়া অনেকাংশে আটকানো সম্ভব হবে।

ওই সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের নানা জায়গায় প্রচুর বোমা ফেটেছিল। বহু সাধারণ মানুষ তাতে ঘায়েল হন। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। আখেরে আঘাত আসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গায়ে। বিষয়টি নিয়ে বারে বারেই তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দরজায় কড়া নেড়েছেন। ওই পঞ্চায়েত নির্বাচ‌ন, গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময়েও এই নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল কমিশনের কাছে।

‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’র কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষ বোমার আঘাতে জখম হন। শিশুর প্রাণ যেতে বসে। আতঙ্ক গ্রাস করে সাধারণ মানুষকে। বোমা ফাটিয়ে এলাকাকে সন্ত্রস্ত করার ঘৃণ্য মানসিকতা যে কোনও মূল্যে বন্ধ করা দরকার।’’

অনেকের বক্তব্য, সাম্প্রতিক কালে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় রাজনৈতিক এলাকা দখল নিয়ে যে ভাবে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ফেটেছে, তাতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। সেই কারণেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’র ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy