ট্যাঙ্কারটিকে এলপিজি বটলিং প্ল্যান্টে ঢোকানো হচ্ছে। —নিজস্ব িচত্র
জাতীয় সড়ক ধরে ছুটছে এলপিজি ভর্তি ট্যাঙ্কার। ট্যাঙ্কের ঢাকনা ফুঁড়ে সোঁ-সোঁ শব্দে বেরচ্ছে গ্যাসের কুণ্ডলী। সোমবার সকালে বাগনানের খাদিনা মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এই দৃশ্য দেখে পিলে চমকে উঠেছিল পথচলতি মানুষের। তবে বিপদ ঘটেনি। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী স্বপন সাঁতরা এবং অন্য পুলিশকর্মীদের তৎপরতায় তা এড়ানো গিয়েছে। কী ঘটেছিল?
স্বপনবাবুর বর্ণনায়, ‘‘ঘড়ির কাঁটা তখন সবে আটটা পেরিয়েছে। খাদিনান মোড়ে ডিউটি করছিলাম। জাতীয় সড়কে হু-হু করে দৌড়চ্ছে একের পরে এক গাড়ি। হঠাৎ নজরে এল, কোলাঘাটের দিক থেকে আসছে একটি এলপিজি গ্যাস ট্যাঙ্কার। ট্যাঙ্ক থেকে গ্যাস বার হচ্ছে। গাড়ির পিছনের দৃশ্য ঢাকা পড়ে গিয়েছে ধোঁয়া আর গ্যাসের আস্তরণে। এত কিছু ঘটে চললেও ট্যাঙ্কারের চালক কিছুই টের পাননি।’’
এই দৃশ্য দেখে স্বপন ট্যাঙ্কারটি দাঁড় করান খাদিনান মোড় থেকে কিছুটা দূরে নিরাপদ একটি ফাঁকা জায়গায়। ওই গাড়ির পিছনে থাকা সমস্ত গাড়িকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় খাদিনান মোড়ে। এরই মধ্যে স্বপন ফোন করে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন বাগনানের ওসি (ট্রাফিক) ভাস্কর গায়েনকে। ভাস্করবাবু খবর পাঠিয়েছিলেন দমকলকে। খবর পাঠানো হয় উলুবেড়িয়া ট্র্যাফিক গার্ডেও। ওই ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি নিশিকান্ত নস্করের নির্দেশে পুলিশকর্মীরা দ্রুত জাতীয় সড়কের অন্য প্রান্তটি বন্ধ করে দেন। এরপর শুরু হয় গ্যাস ট্যাঙ্কারটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। স্বপন বলেন, ‘‘ততক্ষণে আরও দ্রুত গতিতে গ্যাস বেরনো শুরু হয়েছিল ট্যাঙ্ক থেকে। গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। গাড়িটির জাতীয় সড়ক ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আশপাশের সমস্ত রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’
প্রথমে ট্যাঙ্কারটিকে পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে জাতীয় সড়ক ধরে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর নরেন্দ্র মোড় থেকে বাঁক নিয়ে রাস্তার অন্য প্রান্ত ধরে গাড়িটি এগোতে থাকে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গাড়িটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বীরশিবপুরে একটি সংস্থার এলপিজি বটলিং প্ল্যান্টে। সেখানে ট্যাঙ্কার থেকে বাকি গ্যাস বার করে দেওয়া হয়। কাটে বিপদ।
বীরশিবপুরে যে সংস্থার বটলিং প্ল্যান্টে গাড়িটিকে ঢোকানো হয়েছিল, তার টেরিটরি কো-অর্ডিনেটর নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ট্যাঙ্কারটি হলদিয়া থেকে গ্যাস ভর্তি করে পটনা যাচ্ছিল। যে কোনও কারণে গ্যাস লিক করেছিল। বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তবে ট্র্যাফিক পুলিশের নজরে আসায় তা এড়ানো গিয়েছে।’’পুলিশের কাজে খুশি এলাকাবাসী। রামপ্রসাদ তেওয়ারি নামে এক গাড়িচালক বলেন, ‘‘পুলিশ যে ভাবে কাজ করল, তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ওদের জন্যই বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল সকলে।’’ হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের সুপার সৌম্য রায় বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক পুলিশের এই ভূমিকায় জেলা পুলিশ গর্বিত। টিম ওয়ার্ক-এর জন্য বাগনান এবং উলুবেড়িয়া ট্রাফিক গার্ডের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’’বছর দেড়েক আগে এই জাতীয় সড়কেই বাগনানে কাছে একটি এলপিজি ভর্তি ট্যাঙ্কারকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছিল একটি গাড়ি। এরপর গোটা এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এ দিনের ঘটনা সেই স্মৃতিকে উসকে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy