Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মন্দার আবহে আরও জীর্ণ ধনেখালি-তাঁত

অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া। পড়ছে টাকার দাম। নাভিশ্বাস ছোট শিল্পেও। পুজোর মুখে কেমন আছেন দুই জেলার শিল্প-কারখানার শ্রমিকেরা?অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া। পড়ছে টাকার দাম। নাভিশ্বাস ছোট শিল্পেও। পুজোর মুখে কেমন আছেন দুই জেলার শিল্প-কারখানার শ্রমিকেরা?

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রকাশ পাল
ধনেখালি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

ধনিয়াখালি ইউনিয়ন তাঁতশিল্পী সমবায় সমিতির বিক্রয়কেন্দ্রে সোমবার দুপুরে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছিলেন দুই কর্মী। সকাল থেকে সাকুল্যে ১১ জন খদ্দের শাড়ি কিনেছেন। গত ৯ দিনে কেনাবেচার অঙ্ক মাত্র আড়াই লক্ষ টাকার মতো। সমিতির সম্পাদক দীনবন্ধু লাহা বলেন, ‘‘জিএসটি-র সমস্যা রয়েছে। তবু গত বছর এই সময়ে দ্বিগুণ বিক্রি ছিল। গুদাম এবং বিক্রয়কেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় ছ’হাজার শাড়ি পড়ে রয়েছে। আগে কখনও এই পরিস্থিতি হয়নি।’’

দীনবন্ধুবাবু থেকে সমিতির সেলসম্যান প্রদীপ দত্ত, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দোলগোবিন্দ বীট— সকলেই মনে করেন, দেশজুড়ে মন্দার দীর্ঘ ছায়া এখানেও পড়েছে। দীনবন্ধুবাবুর কথায়, ‘‘নোটবন্দি-জিএসটিতে আমাদের শিল্পে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা পড়েছিল। আর এ বছরের পরিস্থিতি কহতব্য নয়। আমার ধারণা, মানুষের হাতে পয়সা নেই। এটা তো অর্থনৈতিক মন্দাই।’’

ধনেখালির ‘সোমসপুর ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ উইভার্স সোসাইটি লিমিটেড’-এর কর্তারা জানান, গত বছর পুজোর আগে প্রতিদিন ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার শাড়ি বিক্রি হয়েছে। এ বার এই অঙ্ক ৩০ থেকে ৪০ হাজার। রবিবার ১৫-১৬ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। বউনি হয়নি এমন দিনও গিয়েছে গত দু’তিন মাসে। সমিতির অন্যতম কর্তা মোহনলাল দত্ত বলেন, ‘‘এই শিল্প এমনিতেই ধুঁকছে। এ বার মন্দার জন্য পরিস্থিতি চরমে। এমন চললে এই শিল্পকে বাঁচানো দুষ্কর হবে।’’ ম্যানেজার বিনয়ভূষণ লাহা জানান, অগস্ট মাস পর্যন্ত হিসেবে সমিতিতে ৪৪ লক্ষ টাকার শাড়ি জমে ছিল।

সোমসপুরের সমবায়ের প্রায় আড়াইশো তাঁতি রয়েছেন। অপরটিতে প্রায় ১৮০ জন। তাঁরা জানান, তাঁত চালিয়ে পেট ভরছে না। অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আসছে না। তাঁতির সংখ্যা কমেছে। অর্থাৎ, শাড়ি তৈরির সংখ্যাও কমেছে। তাতেও শাড়ি জমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিল্পের ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত তাঁরা।

ইনাথনগর গ্রামের তাঁতশিল্পী শিবু দাস বলেন, ‘‘প্রায় ৪০ বছর শাড়ি বুনছি। পায়ে-কোমরে ব্যথা না থাকলে আমিও অন্য কাজের সন্ধান করতাম। তাঁত বুনতে বাড়ির মেয়েদের সুতো তৈরি করে দিতে হয়। একটি বালুচরী জাতের শাড়ি বুনতে আমার তিন দিন লাগে। মজুরি পাই ৩০০ টাকা। অর্থাৎ, আমি আর স্ত্রী মিলে দিনে ১০০ টাকা রোজগার করি। ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। ওকে এই পেশায় আনব না।’’ সোমসপুরের বাসিন্দা কেদারনাথ ভড় ২৫ বছর ধরে তাঁত বোনেন। তিনি বলেন, ‘‘বড় মেয়ে প্রাণিবিদ্যায় অনার্স নিয়ে বিএসসি পড়ছে। ছোট মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। আমাকে সাহায্যের পাশাপাশি স্ত্রীকে অন্য লোকের সুতো তৈরি করে দিতে হচ্ছে। তাঁত চালিয়ে সত্যিই সংসার চলছে না।’’

সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা জানান, একে নতুন প্রজন্মের মেয়েদের মধ্যে শাড়ি পড়ার প্রবণতা কমেছে। তার উপরে ধনেখালি তাঁতে নতুন নকশা সে ভাবে আসছে না। সেই কারণে চাহিদা কমেছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে শিল্পে থাবা বসাচ্ছে জিএসটি বা অর্থনৈতিক মন্দা। ফলে, এখানকার তাঁতশিল্প ক্রমে আরও বিবর্ণ হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dhaniakhali Weaving
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy