Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বৃদ্ধার উপরে ‘অত্যাচার’ ছেলে ও বৌমার

মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের পাশে ময়রাপাড়ার বাসিন্দা মিনতি রানার অভিযোগ, বাড়ির একতলার ঘরে কার্যত নজরবন্দি করে রেখে গত ১০ বছর ধরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে তাঁর উপরে।

অসহায়: বাড়ির একতলায় মিনতিদেবী। হাওড়ার ময়রাপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

অসহায়: বাড়ির একতলায় মিনতিদেবী। হাওড়ার ময়রাপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
হাওড়া শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

জমি বিক্রি করতে বৃদ্ধা মায়ের উপরে অত্যাচারের ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলের বিরুদ্ধে সোমবারই কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হাইকোর্ট। এক দিনের মধ্যে হাওড়ার বাঁকড়ার বাড়িতে মাকে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ বার সেই হাওড়াতেই বাড়ি থেকে তাড়াতে ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধার উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠল ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তেরা দু’জনেই প্রাক্তন সরকারি কর্মী।

মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের পাশে ময়রাপাড়ার বাসিন্দা মিনতি রানার অভিযোগ, বাড়ির একতলার ঘরে কার্যত নজরবন্দি করে রেখে গত ১০ বছর ধরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে তাঁর উপরে। তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে সেই ঘরে ভাড়াটে বসাতেই এই নির্যাতন। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। অভিযুক্ত ছেলে-বৌমা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্বামীহারা ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, ছেলে কমলেশের বিয়ের পর থেকেই বৌমা বেবি শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। পরে তা মানসিক নির্যাতনে পৌঁছয়।

বছর ছয়েক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে ওই নির্যাতন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছয় বলে দাবি মিনতিদেবীর। অশান্তি এতটাই যে, বৃদ্ধাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছেন পাড়া-পড়শিরাও।

বৃদ্ধার অভিযোগ, বহুদিন আগেই তাঁকে আলাদা করে দিয়েছেন ছেলে-বৌমা। একার সংসারে বাজার করা, রান্নাবান্না সবই নিজের হাতে করেন। বাড়িতে পানীয় জলের কল থাকলেও তাঁকে জল আনতে হয় রাস্তার কল থেকে। বিবাহিত তিন মেয়ে এলে দেখা করতে দেওয়া হয় না। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘নিজের কাজ নিজে করতে হয় বলে দুঃখ নেই। কিন্তু রান্না করা খাবার নিয়ে যখন খেতে বসি, তখন তার উপর থেকে পোষা কুকুরের মল মিশিয়ে দেওয়া হয়। শৌচাগারে গেলে জল বন্ধ করে দেয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলে দোতলা থেকে চোখে বালি ছুড়ে দেয়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘ওরা চায় মরে যাই বা চলে যাই। গেলে ওই ঘরে ভাড়াটে বসাবে। কিন্তু যাব কোথায়?’’

স্থানীয় ব্যাঁটরা থানায় ২০১৬ সাল থেকে দফায় দফায় অভিযোগ করলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করছেন মিনতিদেবী।

বৃদ্ধার ছোট মেয়ে মিতা সরকার বলেন, ‘‘আমরা মাকে দেখতে গেলে বৌদি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। কিছু বলতে গেলে মারতে আসেন। ভাবেন সম্পত্তির দখল নিতে এসেছি।’’ বৃদ্ধার উপরে কী ভাবে নির্যাতন চলছে, তা জানেন ময়রাপাড়া এলাকার বাসিন্দারাও। স্থানীয় শম্ভু দাস বলেন, ‘‘আমরা চাই ওই বৃদ্ধার উপরে অত্যাচার বন্ধ হোক। কয়েক দিন আগেও মিনতি মাসিমাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। পরে পুলিশ এসে ঘরে ঢুকিয়েছে।’’

তবে সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করছেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্মী কমলেশবাবু এবং বিএসএনএলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বেবি। বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে বেবি বলেন, ‘‘সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ। ওঁর মেয়েরা সম্পত্তির জন্য আমাকে মারতে আসে। শুনুন, আমার কেউ কিছু করতে পারবে না। মিডিয়া কত লিখবে লিখুক না।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বৃদ্ধাকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়ার পরেও স্থানীয় থানা কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা তদন্ত করে দেখছি। নির্যাতনের প্রমাণ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Old woman Torture Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy