n মোচ্ছব: উৎসবে ডিজে বাজানোর চেনা ছবি এটাই। ফাইল ছবি।
আসছে পুজোর মরসুম। আনন্দের অনুষঙ্গে এ বারও কি ডিজে-র দাপট থাকবে? পুজোর মণ্ডপে, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ফিরে আসবে সেই শব্দ-দৈত্য? ভুক্তভোগীদের সেই আশঙ্কা থাকছেই। তবু ডিজে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শুক্রবার আগেভাগেই পথে নামলেন হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার সাধারণ মানুষ।
এ দিন শহরের একটি বিজ্ঞান সংস্থার তরফে ওই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা চুঁচুড়া থানার সামনে থেকে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে ঘড়ির মোড়ের সামনে দিয়ে মিছিল করেন। থানায় স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, চুঁচুড়া-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ডিজের জ্বালায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। বিয়েবাড়ি থেকে রামনবমী, দুর্গাপুজো, ইদ, মহরম— সব অনুষ্ঠানেই তারস্বরে ডিজে বাজানো কার্যত রীতি হয়ে গিয়েছে। বড়দিন, নববর্ষের মতো বিশেষ দিন উদযাপনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ডিজে বন্ধে সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
চন্দননগর কমিশনারেট এবং হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের আধিকারিকরা অবশ্য দাবি করেছেন, অভিযোগ পেলে ডিজের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ধরপাকড় চলে। কমিশনারেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের সমস্যা লাঘব করতে ডিজের বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানো হবে।’’
আইন অনুযায়ী শব্দের সহনমাত্রা
• সাইলেন্ট জ়োন (স্কুল-হাসপাতাল ইত্যাদি)— ৪৫ ডেসিবেল
• আবাসিক অঞ্চল— ৫৫ ডেসিবেল
• মিশ্র এলাকা ( আবাসিক ও বাজার এলাকা)— ৬৫ ডেসিবেল
• শিল্পাঞ্চল—৭০ ডেসিবেল
অভিযোগ, ডিজে থেকে ১০০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ হয়। কখনও শব্দমাত্রা ছাড়ায় ১২০-১২৫ ডেসিবেলও।
এমন পুলিশি প্রতিশ্রুতি অবশ্য আগেও মিলেছে বলে অনেকের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে হয়তো পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু সে সব নেহাতই বিচ্ছিন্ন উদাহরণ। পুলিশি নজরদারির ফাঁক গেলে উৎসবে ডিজে-র দাপটে সে ভাবে লাগাম পরে না। সদ্য শেষ হওয়া শ্রাবণী মেলাতেও তারকেশ্বরে জলযাত্রীদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ধারে জলসত্র শিবিরে কানফাটানো আওয়াজে ডিজে বেজেছে। পুলিশ দেখেও দেখেনি বলে অভিযোগ।
এ দিনের আন্দোলনকারীদের এক জনের অভিযোগ, গত বছর ছটপুজোর দিন চুঁচুড়ায় গঙ্গার ধারে তারস্বরে ডিজে বাজছিল। বিষয়টি থানায় জানানো হলে সেখান থেকে বলা হয়, ‘এখন ডিজে বাজেয়াপ্ত করলে বহু লোক থানায় চলে আসবে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমস্যা হবে’। ফলে, পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।
কুন্তীঘাটের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা রাম আশরে প্রসাদের প্রশ্ন, ‘‘ডিজের কারণে মানুষের হৃদযন্ত্র, কান এবং মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিপজ্জনক এই জিনিস বন্ধ হবে না কেন?’’ চন্দননগরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা গণেশ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মারাত্মক পরিস্থিতি। নিজেরা আনন্দ করতে গিয়ে শিশু বা অসুস্থদের কথা কেউ ভাবে না।’’ বাবার হাত ধরে চতুর্থ শ্রেণির সায়ন্তনী গঙ্গোপাধ্যায়ও আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। সে বলে, ‘‘কোনও অনুষ্ঠান হলেই ডিজে বাজে। পড়াশোনা করতে পারি না। নাচ-গানের অনুশীলনও করা যায় না। ডিজে বক্স বন্ধ হোক।’’
মাস ছয়েক আগে মাধ্যমিক পরীক্ষার মুখেই সরস্বতী পুজোয় মগরা-সহ বিভিন্ন জায়গায় ডিজের দাপটে নাকাল হয় পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদের তাতে হেলদোল হয়নি। রাজবলহাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি, চিকিৎসক প্রভাস দাস জানান, ক্রমাগত প্রচারে রাজবলহাট এলাকায় সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। ফলে, ডিজের অত্যাচার কিছুটা কমেছে। কিন্তু আঁটপুর, জাঙ্গিপাড়া-সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় উৎসব-অনুষ্ঠানে ডিজের কানফাটানো আওয়াজ বন্ধ হয়নি। শ্রীরামপুরের ‘শব্দদূষণ বিরোধী নাগরিক উদ্যোগ’-এর তরফে জেলার বিভিন্ন পুরসভায় ডিজে বন্ধের দাবিতে চিঠি দিয়ে আর্জি জানানো হয়। তাতেও কাজ হয়নি।
চুঁচুড়ার এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘খবরের কাগজে পড়েছিলাম, আমাদের পুরসভা ডিজে বন্ধের চেষ্টা করছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও সক্রিয়তা আমাদের চোখে পড়েনি। ফলে, পরিস্থিতি বদলায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy