ভিন্নধর্মী: বৃষ্টিতে চাষ চলছে চণ্ডীতলায় (বাঁ দিকে) ডানকুনিতে বন্ধ মণ্ডপের কাজ (ডান দিকে)। ছবি: দীপঙ্কর দে
জল-কাদায় ভরেছে খেত। হাসি ফুটেছে ধান চাষিদের মুখে। কিন্তু মাঠ ভর্তি সেই জল-কাদাই চিন্তায় ফেলেছে পুজো উদ্যোক্তাদের। সময়ে মণ্ডপের কাজ শেষ হবে তো! পুজোর মুখে দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে দুই বিপরীত চিত্র হুগলিতে।
চলতি বর্ষার মরসুমে দক্ষিণবঙ্গে এতদিন সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। ফলে, রাজ্যের প্রধান ধান উৎপাদক জেলা হুগলির চাষিরা চাষের জল নিয়ে সঙ্কটে পড়েছিলেন। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না-হওয়ায় মাটির জলস্তর হু-হু করে নামতে থাকে। মিনি ও ডিপ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে। নদীতে জল না-থাকায় তারকেশ্বর, পুরশুড়া, চাঁপাডাঙা, সিঙ্গুর, কামারকুণ্ডু, চন্দনপুর, ধনেখালি, পোলবা, বলাগড়, জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা-সহ প্রায় সর্বত্রই সেচ ব্যবস্থাও ধাক্কা খায়। ধানের বীজতলা তৈরিতে নাকাল হন চাষিরা। নজিরবিহীন ভাবে শ্রাবণ মাসে ডিভিসি-র জলাধার থেকে জল ছেড়ে বীজতলার ধানচারা জমিতে বসানোর ব্যবস্থা করতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে গত দু’দিনের বৃষ্টিপাতে চাষিরা রীতিমতো আনন্দিত। আনন্দিত কৃষি দফতরও। তাদের হিসেবে, হুগলিতে প্রাথমিক ভাবে ৪৮ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছিল। সেই ঘাটতি এখন কমে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। এ বার জেলায় মোট ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
জেলার এক কৃষি-কর্তা বলেন,‘‘একটা সময় মনে হয়েছিল, কম বৃষ্টির কারণে এ বার ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারা যাবে না। কিন্তু সেই চিন্তা আপাতত নেই। চলতি বৃষ্টিতে ধান চাষে বিশেষ সুবিধা হবে। ধান গাছ বাড়ার মুখে এই বৃষ্টি খুব জরুরি।’’ ধনেখালির কানা নদী এলাকার চাষি কাশীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘চাষের কাজে শ্রাবণ মাসে আমরা এ বার জলের যে আকাল দেখেছি, তা বহু বছর হয়নি। তবে, গত দু’দিনের বৃষ্টিতে ধান চাষে বিশেষ উপকার হবে। ধানের ফলনও ভাল হবে বলে মনে হচ্ছে।’’
কিন্তু মণ্ডপের কাজ কী সময়ে শেষ হবে?
সেটাই চিন্তায় ফেলেছে পুজো উদ্যোক্তাদের। কোনও মাঠ ভরেছে জলে। কোনও মাঠে থকথকে কাদা। মণ্ডপের ভিতরের কাজ কোনওক্রমে চললেও অনেক জায়গাতেই বাইরের কাজ দু’দিন ধরে কার্যত বন্ধ। উত্তরপাড়ার চরকডাঙা সাবুতলা সর্বজনীন এ বার পুজোর থিমে জলসঙ্কটের বার্তা তুলে ধরেছে। প্রায় এক মাস ধরে কাজ করছেন কাঁথি থেকে আসা শিল্পীরা। কিন্তু আকাশের জল যে শেষমেশ তাঁদের সঙ্কটে ফেলবে, আঁচ করতে পারেননি উদ্যোক্তারা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা উৎপলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মণ্ডপের বাইরের কাজ একেবারেই করা যাচ্ছে না। শিল্পীরা বসে রয়েছেন। টানা বৃষ্টি চলতে থাকলে বড় বিপদ। আমরা অনেক আগেই মণ্ডপের কাজ শেষ করি।’’ পুজোর আর এক উদ্যোক্তা তন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে মাঠে রীতিমতো জল জমেছিল। বুধবার জল কিছুটা কমলেও মণ্ডপ তৈরির কাজে বৃষ্টি বড় বাধা হয়ে যায়।’’
ডানকুনি ফুটবল মাঠে বড় বাজেটের পুজো হয়। এ বার তাদের থিম ‘হীরকরাজার দেশে’। অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জনাই থেকে আমাদের মণ্ডপ শিল্পীরা এসেছেন। তাঁরা বৃষ্টির জন্য ভিতরের কাজ করছেন। আমরা মানুষের দেখার সুবিধার জন্য অনেক আগেই মণ্ডপের সব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিই। কিন্তু এ বার কিছুই বলা যাচ্ছে না বৃষ্টির কারণে।’’
উত্তরপাড়া ভদ্রকালী বলাকা থিম করেছে ‘নারী শক্তি ও ক্ষমতায়ন’। তমলুক এবং মগরা থেকে আসা প্রায় ২৫ জন শিল্পী তিন মাস ধরে কাজ করছেন। তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। অন্যতম উদ্যোক্তা সৌমেন ঘোষ বলেন, ‘‘মণ্ডপের ভিতরের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু বৃষ্টিতে বাইরের কাজ হবে কী করে? মাঠে প্রচণ্ড কাদা। এ ভাবে টানা বৃষ্টি চললে আমরা মুশকিলে পড়ব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy