মানবিক: চিকিৎসক শেখ মহম্মদ ইসমাইলের (ডান দিকে) সঙ্গে মোহন মাঝি (বাঁ দিকে) নিজস্ব চিত্র
বছর তিনেক আগে তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। মাসতিনেক ধরে ছিলেন হাওড়ার শ্যামপুরের শিকল এলাকার গ্রামীণ চিকিৎসক শেখ মহম্মদ ইসমাইলের বাড়িতে। অবশেষে ওই চিকিৎসকের উদ্যোগেই শনিবার বাড়ি ফিরলেন মুর্শিদাবাদের সুতি থানার মহেশাইল গ্রামের বছর চব্বিশের যুবক মোহন মাঝি। নিখোঁজ হওয়ার সময়ে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এখন কিছুটা সুস্থ।
শনিবার শ্যামপুর থানায় এসে মোহনের দাদা সুবীর ভাইকে ফিরে পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। দাদাকে চিনতে পারেন ভাই। সুবীর জানান, মোহন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। যখন ২০ বছর বয়স, তখন মোহন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে মোহন নিখোঁজ হন। অনেক খুঁজেও কোথাও সন্ধান না-পেয়ে সুবীররা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাই শুক্রবার বিকেলে শ্যামপুর থানা থেকে যখন ফোন পেলেন, নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। শ্যামপুর থানায় ইসমাইলকে জড়িয়েও কাঁদতে থাকেন সুবীর। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি চিকিৎসকের মানবিক মুখ। আপনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও নজির গড়লেন। ভাইকে সুস্থ করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।’’
মোহনের খোঁজ কী ভাবে পেলেন ইসমাইল?
ওই গ্রামীণ চিকিৎসক জানান, মাসতিনেক আগে মোহনকে শিকল গ্রামের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখেন তিনি। সেই সময় মোহন দোকানে দোকানে খাবার চেয়ে খাচ্ছিলেন। গায়ে নোংরা পোশাক। পরিবারের আপত্তি উড়িয়ে ইসমাইল তাঁকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করে। চিকিৎসায় কিছুটা সাড়া দেন মোহন। ইসমাইলের কথায়, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, মোহন কোনও ভাল পরিবারের ছেলে। অবশ্য তখন ওঁর নাম জানতাম না। ২৭ বছর ধরে গ্রামে চিকিৎসা করছি। অনেক রোগীকে ভাল করেছি। তবে মানসিক রোগীর আগে কখনও চিকিৎসা করিনি। ভেবেছিলাম, কিছুদিন আমার বাড়িতে রেখে একটু সুস্থ করে ওঁকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাব। ওঁকে নিয়ে ঘুরতাম। বেশি করে কথা বলতাম। দু’দিন আগে ও নিজের নাম-ঠিকানা বলে।’’
এ দিন মোহনকে নিয়ে তাঁর দাদা যখন বাড়ির দিকে রওনা দেন, ইসমাইলেরও দু’চোখের কোণ চিকচিক করছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy